০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪

দক্ষ বিতার্কিক হতে চাও, জেনে নাও কিছু কৌশল

শ্রেয়া ঘোষ
০৪ জুলাই ২০২৪, ০৮:১০
দক্ষ বিতার্কিক হয়ে ওঠার জন্য নানা কৌশল অনুসরণ করা খুব জরুরি। ছবি: প্রতীকী

দেশের স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে প্রচলিত সহশিক্ষা কার্যক্রমের মধ্যে বিতর্ক অন্যতম। বাগ্মিতা, চিন্তনদক্ষতা ও উপস্থাপনার মতো গুরুত্বপূর্ণ এবং যুগের সঙ্গে অতি প্রাসঙ্গিক গুণগুলোর ব্যাপারে শিক্ষা ও চর্চা হয় এর মাধ্যমে। সহজ কথায়, যেকোনো প্রাসঙ্গিক সামাজিক-অর্থনৈতিক-রাজনৈতিক-বৈশ্বিক বিষয়ে পক্ষে-বিপক্ষে একটা নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে কথা বলার মাধ্যমে যে প্রতিযোগিতা হয়, তা-ই বিতর্ক। বিতর্ক বিষয়টি অনেকেই হয়তো নিছক ঝগড়া মনে করেন। তবে এটি একটি শিল্প। সেই শিল্পের দক্ষ শিল্পী তথা দক্ষ বিতার্কিক হয়ে ওঠার জন্য নানা কৌশল অনুসরণ করা খুব জরুরি। দক্ষ হয়ে ওঠার কিছু কৌশল আছে। সেসব যদি নিয়মিত চর্চা করো, আয়ত্ত্ব করো, তবে ধীরে ধীরে তুমিও হয়ে উঠবে দক্ষ বিতার্কিক। শাণিত যুক্তির আলোকে হারিয়ে দিতে পারবে প্রতিপক্ষকে। প্রতিষ্ঠিত করতে পারবে নিজের অভিমত। এ লেখায় দক্ষ বিতার্কিক হওয়ার কিছু কৌশল নিয়ে থাকল সংক্ষিপ্ত আলোচনা।

গবেষণা ও প্রস্তুতি
পুঙ্খানুপুঙ্খ গবেষণা সফল বিতার্কিক হয়ে ওঠার ভিত্তি মজবুত করে। বিতর্ক শুরু করার আগে গবেষণায় নিজেকে নিমজ্জিত করো। তথ্যের জন্য বিভিন্ন উৎস খোঁজো এবং বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি সম্পর্কেও বুঝতে হবে। কঠিন গবেষণা শুধু তোমার যুক্তিগুলো শক্তিশালী করবে না; বরং বিরোধী মতামতকে কার্যকরভাবে মোকাবিলা করার জন্য তোমাকে সজ্জিত করে তুলবে।

শক্তিশালী যুক্তি তৈরি
বিতর্কের জন্য সুগঠিত যুক্তি তৈরি করা অপরিহার্য। বিতর্কের জন্য আগে সংগ্রহ করা তথ্যের প্রধান পয়েন্টগুলো চিহ্নিত করা শিখতে হবে। পাশাপাশি প্রমাণসহ সেই সব তথ্যের সমর্থনে পাল্টা যুক্তি দেওয়ার জন্য নিজেকে তৈরি করতে হবে। যৌক্তিক ও সংগত যুক্তি উপস্থাপন করে তুমি সহজেই নিজের অবস্থান তৈরি করতে পারবে। এর মধ্য দিয়ে বিতর্ক প্রতিযোগিতাতেও নিজ দলের পক্ষে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।

শ্রদ্ধাশীল ও মনোযোগী হওয়া
বিতর্ক কেবল তোমার যুক্তি উপস্থাপন করার জন্য নয়, পাশাপাশি প্রতিপক্ষের উপস্থাপন করা পয়েন্ট তথা তথ্যগুলো মনোযোগ দিয়ে শুনতে হবে। নইলে সেই তথ্যের বিপরীতে বলার জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য উপস্থাপন করা কঠিন। তাই বিরোধী দলের দৃষ্টিভঙ্গিকে শ্রদ্ধা করার মধ্য দিয়ে নিজের যুক্তিগুলো উপস্থাপন করো।

কার্যকর যোগাযোগ-দক্ষতা
বিতর্কে কার্যকর যোগাযোগের দক্ষতা অর্জন করা গুরুত্বপূর্ণ। তাই বিতর্ক করার সময় চোখের যোগাযোগ বজায় রাখতে হবে। পাশাপাশি কথার ভাব বা গাম্ভীর্য অনুযায়ী নিজের কণ্ঠস্বর পরিবর্তন করো এবং মূল পয়েন্টগুলোতে জোর দাও। এ ছাড়া দর্শক ও শ্রোতাদের মনোযোগ আকর্ষণের জন্য প্রাসঙ্গিক অঙ্গভঙ্গিও যোগাযোগ তৈরির ক্ষেত্রে খুব কাজে দেয়।

সংযম ও সম্মান বজায় রাখা
বিতর্ক করার সময় প্রতিপক্ষ দলের প্রতি সংযত ও শ্রদ্ধাশীল থাকা গুরুত্বপূর্ণ। ব্যক্তিগত আক্রমণ বা সংবেদনশীল প্রতিক্রিয়া এড়িয়ে চলতে হবে। কারণ, একটি সম্মানজনক ও পেশাদার আচরণ গড়ে তোলা বিতার্কিকের পরিপক্বতা প্রদর্শন করে। পাশাপাশি বিতার্কিক হিসেবে শ্রোতাদের চোখে বিশ্বাসযোগ্যতাও বাড়ায়।

অভিযোজন যোগ্যতা ও নমনীয়তা
সফল বিতার্কিকেরা সব সময় নতুন তথ্য জানার চেষ্টা করে এবং বিকশিত আলোচনার প্রতিক্রিয়ায় নিজেদের যুক্তি সামঞ্জস্য করে অভিযোজন যোগ্যতা প্রদর্শন করে। আর নমনীয়তা তোমাকে অপ্রত্যাশিত চ্যালেঞ্জগুলো নেতিবাচক করতে এবং আরও ভালো যুক্তি উপস্থাপন করতে সাহায্য করবে।

লেখক: বিতর্কে ১৪ বার জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত ও হবার্ট অ্যান্ড উইলিয়াম স্মিথ কলেজের ডিনস স্কলার ।

সর্বাধিক পঠিত