১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪

এইচএসসি পরীক্ষার্থী রোহান সেনা অফিসার হতে চেয়েছিল, স্বপ্ন থেমে গেল গুলিতে

কিশোর ডাইজেস্ট ডেস্ক
০৫ অগাস্ট ২০২৪, ০৮:০২
রোহান আহমেদ খান। ছবি: ফেসবুক

‘আমার ছেলে তো কোনো রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিল না, কেন তাকে গুলি করে মারল ওরা?’ কাাঁদতে কাঁদতে প্রশ্ন করেন রোহানের মা মনিরা বেগম। ছেলের মৃত্যুর কথা বলতে গিয়েও বারবার কথা আটকে যাচ্ছিল তার। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘এখন আমি ঘরে থাকতে পারি না। ঘরে থাকলেই রোহানের কথা মনে পড়ে। ঘরের পড়ার টেবিলের দিকে তাকালেই আমার পুতের কথা মনে পড়ে যায়। বাবা তো আর ফিরে আসে না? রোহানের বয়স তো ছিল মাত্র ১৭ বছর। কী দোষ ছিল ওর? বাচ্চাদের এভাবে গুলি করে কেউ মারতে পারে?’  

রাজধানীর যাত্রাবাড়ী-শনির আখড়া এলাকায় ১৯ জুলাই শুক্রবার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যায় রোহান আহমেদ খান। দনিয়া বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী রোহান চলতি এইচএসসি পরীক্ষার্থী ছিল। ৭ বিষয় পরীক্ষা দেওয়ার পর কোটা সংস্কার আন্দোলনে পরীক্ষা পিছিয়ে যায়। তারপর কোটা আন্দোলনের জেরে থেমে যায় ওর জীবনও। রোহানের পড়ার টেবিলে সারিবদ্ধভাবে বই সাজানো রয়েছে। কলেজ ড্রেস ঠিকঠাক রয়েছে। শুধু রোহান আর নেই।

রোহানের বাবা সুলতান খান একজন মুদি দোকানদার। শনির আখড়ার পাড়েরবাগ এলাকার বায়তুল সালাম রোডে পরিবার নিয়ে বসবাস করেন। বড় ভাই রাহাত আহমেদ খান অনার্স তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। পরিবারের সদস্যরা জানান, রোহান গত ১৯ জুলাই পাড়েরবাগ রায়তুল জামে মসজিদে জুমার নামাজ পড়তে যায়। এর কিছুক্ষণ পরই তার বাবাকে মোবাইল ফোনে জানানো হয়, রোহানের বুকে গুলি লেগেছে, মিটফোর্ড হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। তারা হাসপাতালে গিয়ে রোহানের মৃত নিথর দেহ দেখতে পান। দুটি গুলি রোহানের বুকের এক পাশ দিয়ে ভেদ করে ওপাশ দিয়ে বের হয়ে গেছে। তার পায়েও একটা গুলি করা হয়েছে।

রোহানের বড় ভাই রাহাত আহমেদ বলেন, ‘আমার ভাইয়ের স্বপ্ন ছিল সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়া। বড় অফিসার হওয়া। এর জন্য স্কুল ও কলেজের স্কাউট যোগ দেয়, খুবই নিয়মকানুন মেনে জীবনযাপন করত। কিন্তু ভাইয়ের স্বপ্ন একটা বুলেটই শেষ করে দিল। এই মৃত্যুর দায়ভার কে নেবে? এমনভাবে গুলি করা হয়েছে বুকের একপাশ দিয়ে আরেকপাশ দিয়ে বের হয়ে গেছে। রাষ্ট্র কোন পর্যায়ের গেলে এমন ঘটনা ঘটাতে পারে?’

তিনি বলেন, ‘আমার ভাই শুরু থেকেই শিক্ষার্থীদের আন্দোলন থেকে দূরে ছিল। কোটা সংস্কার আন্দোলন নিয়ে তাকে ফেসবুকের উল্টাপাল্টা পোস্ট দেওয়া থেকেও দূরে থাকতে বলেছিলাম। সে আমাদের কথা শুনত। মহল্লার ভেতরেই ছিল। জুমার নামাজ শেষ হওয়ার ১০-১৫ মিনিটের মধ্যেও শুনতে পাই ভাইয়ের বুকে গুলি লেগেছে। আমার ভাই নিরপরাধ ছিল, সে কোনো কিছুর সঙ্গে জড়িত ছিল না। তাকে মারার কোনো যৌক্তিকতা দেখি না।’

বাবা সুলতান খান বলেন, ‘কোনো দল বা গ্রুপের সঙ্গে জড়িত ছিল না। আন্দোলনের সঙ্গেও ছিল না। সে পড়ালেখার পাশাপাশি দোকানে সময় দিত। সন্ধ্যার দিকে ওর নিথর দেহ নিয়ে এলাকায় ফিরে আসি।’

দনিয়া কলেজের শিক্ষকরা বলেন, ‘রোহান কলেজে মেধাবী শিক্ষার্থী ছিল। স্কাউট দলের সদস্য ছিল। আমরা কলেজের পক্ষ থেকে পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছি।’

স্থানীয় এলাকাবাসীরা জানান, রোহান খুবই আন্তরিক এবং মিশুক ছিল। বাবার দোকানে সব সময় দিত। কারও সঙ্গে কোনো শত্রুতা ছিল না। কখনো কোনো মিটিং-মিছিল অংশ নিতে দেখেননি। আন্দোলনের সময় এলাকার অনেকেই রাস্তায় বের হয়েছিল। সেদিন রোহানও রাস্তায় বের হয়েছিল। আর সেখানেই সে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেল ১৭ বছরের কিশোর রোহান।

সর্বাধিক পঠিত