১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪

ভালো বক্তা যেভাবে হবেন

রাজা আহমেদ
২৫ অগাস্ট ২০২৪, ১০:৫১
পাবলিক স্পিকিংয়ের ভয়কে বলে গ্লোসোফোবিয়া, যা অনেক মানুষেরই রয়েছে। ছবি: প্রতীকী

পড়ালেখার পাশাপাশি নিজেকে অন্যান্য জায়গাও মেলে ধরতে হবে। যাতে করে ক্যারিয়ার গঠনের সময় এ অভিজ্ঞতাগুলো কাজে লাগে। নিজেকে সবার সামনে তুলে ধরার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ প্ল্যাটফর্ম হচ্ছে পাবলিক স্পিকিং, যা জীবনের অসংখ্য ক্ষেত্রেই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। পাবলিক স্পিকিং বা সরাসরি দর্শক- শ্রোতাদের সামনে দাঁড়িয়ে চমৎকারভাবে কথা বলতে পারার বিষয়ে বহুদিন ধরে যে জনশ্রুতি চলে আসছে তা হলো এ ধরনের দক্ষতাসম্পন্ন মানুষদের মধ্যে সহজাতভাবেই এই গুণটি রয়েছে। কিন্তু ভুল ধারণা। সত্যিটা হচ্ছে, যথেষ্ট পরিশ্রম করে নিজেদের এ পর্যায়ে নিয়ে এসেছেন তারা। পাবলিক স্পিকিংও দক্ষতা মানুষকে অর্জন করতে হয়। এ বিষয়ে উন্নতি করতে চাইলে নিয়ম মেনে চর্চা ও অনুশীলন করতে হবে এবং সফলতা অর্জনের মতো মনমানসিকতা থাকতে হবে। 

সুন্দর বাচনভঙ্গি থাকা: বিশ্বের সব শ্রেষ্ঠ পাবলিক স্পিকারের মধ্যে একটি সাধারণ বৈশিষ্ট্য হলো অন্যদের প্রভাবিত করতে পারার ক্ষমতা। জন এফ কেনেডি, মারটিন লুথার কিং, স্টিভ জবস প্রমুখ সবার মধ্যেই এই বৈশিষ্ট্য লক্ষ করা যায়। এর রহস্য কী? রহস্য হলো তাদের, বাচনভঙ্গি, শরীরী ভাষা, শব্দচয়ন, স্বরের ওঠানামা। তারা এমন কিছু শব্দ ব্যবহার করতেন যা মানুষের মধ্যে গেঁথে যায়, আকর্ষণীয় করে তোলে। পাশাপাশি তারা বাক্যের কিছু কিছু জায়গায় স্পেস দিতেন, স্বর ওঠানামা করার মাধ্যমে বৈচিত্র্য নিয়ে আসতেন।

দর্শকের কথা মাথায় রেখে বক্তৃতা: বক্তৃতার দর্শক বিভিন্ন বয়স, পেশা, মতাদর্শের অনুসারী হয়ে থাকেন। অধিকাংশ সময়ে সবাই যে ভুলটি করে, তা হলো সব বয়স, পেশার মানুষের জন্য একই ধরসের স্পিচ দেয়। শিশু ও মধ্যবয়স্ক ব্যক্তির বয়সের পার্থক্য এদের মানসিকতাতেও পার্থক্য তৈরি করে। একজন গবেষক ও ব্যবসায়ীর মধ্যে কর্মক্ষেত্রের ভিন্নতা থাকার ফলে একই বক্তৃতা তাদের মধ্যে একই রকম উপলব্ধি তৈরি করতে পারে না। এ কারণে, একেকটি গ্রুপকে একেকভাবে বোঝানো প্রয়োজন। দর্শকের কথা মাথায় রেখে বক্তব্য প্রদান করা উচিত। এ কারণে দর্শক কোন ধরনের, কী ধরনের বিষয় তিনি বুঝাবেন কীভাবে ভালো বুঝালে তিনি বুঝবেন; কোন ধরনের কথা তার কাছে প্রাসঙ্গিক এসব কিছু মাথায় রেখে বক্তৃতা প্রস্তুত করা এবং বুঝানোর উপায় নির্ধারণ করা প্রয়োজন।

গল্প বলা: বক্তৃতায় একটি গল্পের উপস্থিতি বক্তৃতাটিকেই বদলে দেয়। গল্প বক্তৃতার যেকোনো সময়েই বলা যায়, তবে শুরুতে বললে ভালো। গল্প বলার ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত জীবনের গল্প বা বক্তৃতার বিষয়ের সঙ্গে সম্পর্কিত বাস্তবভিত্তিক গল্প বলা উচিত। বলার ক্ষেত্রে সাবলীল ভাষা ব্যবহার করা প্রয়োজন। কেননা এর মাধ্যমে সহজে দর্শকের অনুভূতি স্পর্শ করা সম্ভব এবং দর্শকের পক্ষেও গল্পের সঙ্গে বক্তৃতার বিষয়বস্তুর সম্পর্ক স্থাপন করা সহজ হয়। পাবলিক স্পিকিংয়ে সফলতার একটি ‘গোপন’ উপায় হলো গল্প বলা।

পাবলিক স্পিকিংয়ের ভয় কাটানো: পাবলিক স্পিকিংয়ের ভয়কে বলে গ্লোসোফোবিয়া, যা অনেক মানুষেরই রয়েছে। এটা কাটানো জরুরি। এ ক্ষেত্রে আপনি নিজের সঙ্গে নিজে কথা বলুন অনেক বেশি। বেশি বেশি বন্ধু বানান। তাদের সঙ্গে কথা বলুন। আয়নার সামনে অনুশীলন করুন। যত বেশি অনুশীলন করবেন ভয় তত কমবে।

বেশি করে অনুশীলন: অনুশীলন আপনার জনসাধারণের সামনে কথার দক্ষতাকে বাড়িয়ে দেবে। উপস্থাপনার সঙ্গে আপনার সম্পর্ক অনেক বেশি দৃঢ় করবে। এতে করে আপনার বক্তব্য সাবলীলভাবে উপস্থাপন করতে পারবেন।

শেষ কথা, ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা নেওয়া: মানুষের উন্নতির পথে অন্যতম প্রধান বিষয় হলো ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা নেওয়া। যারা ভাবে তারা সবকিছু জানে, তারা সাধারণত গড়পড়তা বা দুর্বল উপস্থাপক এবং পাবলিক স্পিকার হয়। হার্ভার্ড ইনস্ট্রাক্টর ও লেখক কারমাইন গ্যালো বলেন, ‘এতে আমি অবাক হই না, কারণ বিখ্যাত টেড বক্তাদের সঙ্গে দেখা করে আমি মুগ্ধ হয়েছি যে তারা আমাকে প্রশ্ন করেছেন বা বলেছেন যে আমার বই পড়েছেন। এরা ক্রমোন্নতির পেছেন ছোটেন, তা থেকেই বোঝা যায় যে কেন তারা পাবলিক স্পিকিংয়ে সেরা। যদি আপনার মধ্যে উন্নতির চিন্তা থাকে, তাহলে ব্যর্থতা কোনো অযোগ্যতার লক্ষণ নয় এটা বরং কিছু শেখার সুযোগ। মূল হচ্ছে, ঘটনাটাকে নিজের উন্নতির পথেই একটা পদক্ষেপ হিসেবে দেখা।

সর্বাধিক পঠিত