০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪

বয়ঃসন্ধিকালে নিজেকে গড়ে তোলার উপায়

শাকিব হুসাইন
০৯ জানুয়ারি ২০২৪, ১৯:২৫
বয়ঃসন্ধিকালে নিজেকে গড়ে তোলার উপায়। অলংকরণ : কিশোর ডাইজেস্ট

বয়ঃসন্ধিকাল সবার জীবনে আসে। বয়ঃসন্ধিকাল এমন এক সময়, ছেলেমেয়েদের শারীরিক পরিবর্তনের সাথে সাথে মানসিক পরিবর্তনও ঘটে। এই সময়টাতে তাদের বিভিন্ন বিষয়ের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে হয়। কেউ কেউ ভালো কিছুর সাথে জড়িত থেকে ঠিকভাবে বয়ঃসন্ধিকাল পার করে। আবার কেউ কেউ খারাপ সংস্পর্শে এসে ওই সময়েই নিজের জীবন ধ্বংস করে ফেলে। বয়ঃসন্ধিকালে নিজেকে গড়ে তুলতে হলে বিভিন্ন বিষয় মাথায় রেখে চলতে হয়। এসো, জেনে নিই তার মধ্যে কয়েকটি বিষয়—

চাপ সামলানোর ক্ষমতা রাখা
বয়ঃসন্ধিকালে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন চাপ আসবে। সেই চাপগুলো যথাযথভাবে সামলানোর ক্ষমতা রাখতে হবে। কখনও কখনও বিভিন্ন মানসিক চাপ আসবে। সেই সমস্ত চাপ উতরিয়ে যেতে হবে। চাপ থেকে উত্তরণের জন্য আমাদের সামাজিক বন্ধন বাড়াতে হবে। গবেষকদের মতে, সামাজিক বন্ধন ও বন্ধুত্ব মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে। কোনও ভালো বন্ধু থাকলে বা আপনজন কাউকে নিজের সমস্যার কথা খুলে বলো। দেখবে মানসিক চাপ ধীরে ধীরে কমে যাবে। তোমার বন্ধু বা আপনজন যদি স্বার্থপর হয়ে থাকে, তবে সেক্ষেত্রে মানসিক চাপ কমার বদলে বরং বেড়ে যাবে। তাই বেশি সতর্ক থাকতে হবে এই সময়টাতে।

বন্ধু নির্বাচনে সতর্ক থাকা
বন্ধু এমন একটি শব্দ যার অর্থ বলে শেষ করা যাবে না। একজন ভালো বন্ধুই জীবনের জন্য সব। জীবনের প্রতি মুহূর্তে সে পাশে থাকে। আনন্দ বা দুঃখ সব সময় পাশে থাকে। বয়ঃসন্ধিকালে অনেক বন্ধু হয়। এ সময়ে বিভিন্ন ধরনের বন্ধুর সাথে পরিচয় হয়। বয়ঃসন্ধিকালে অনেকে মাদকের কবলে পড়ে যায়। কিছু কিছু ছেলেমেয়ে তাদের সাথে মিশে নিজেকে হারিয়ে ফেলে। এ সময়ে তারা তা বুঝতে পারে না। ফলে তারা সমাজে আর সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারে না। সমাজের কেউ তাদের ভালো চোখে দেখে না; বরং সব সময় সমাজের কলঙ্ক মনে করে। তাই এমন বন্ধু নির্বাচন করতে হবে, যারা আমাদের জন্য কল্যাণ বয়ে আনবে।

ঠিকভাবে নিজের যত্ন নেওয়া
বয়ঃসন্ধিকালে ঠিকমতো স্বাস্থ্যের যত্ন নিতে হবে। এ সময় ছেলেমেয়েদের মধ্যে সময়মতো খাবার না খাওয়ার প্রবণতাও বাড়ে। ঘরের খাবারের চেয়ে বাইরের খাবারের প্রতি তাদের বেশি আগ্রহ লক্ষ করা যায়। এ সময় ছেলেমেয়েদের খাবারদাবারের প্রতি অভিভাবকদের অনেক বেশি সচেতন হওয়া উচিত। এই সময়ে প্রয়োজনীয় পুষ্টির অভাব পড়লে সন্তানের স্বাভাবিক বিকাশ ব্যাহত হয়। তাই তাদের পছন্দের খাবারকে যতটা সম্ভব স্বাস্থ্যকর করে বাড়িতেই তৈরি করে দিতে হবে। সন্তানদের যতটা সম্ভব সবুজ শাকসবজি, ফলমূল, সামুদ্রিক মাছ, দুধ ও ডিম খাওয়াতে হবে। খাবারের সঙ্গে পর্যাপ্ত বিশ্রাম ও ঘুমের প্রতি লক্ষ রাখতে হবে। তাদের বিভিন্ন শারীরিক ও মানসিক সমস্যা নিয়ে আলোচনা করে সহজ করে দিতে হবে।

বয়ঃসন্ধিকালে বন্ধু নির্বাচনে সতর্ক থাকতে হবে। ছবি : ফ্রিপিক

ধর্মীয় শিক্ষা যথাযথভাবে নেওয়া
ধর্মীয় শিক্ষা খুব ছোটকাল থেকেই প্রত্যেক ছেলেমেয়েকে নিতে হবে। ছোটকাল থেকে ধর্মীয় শিক্ষার মাধ্যমে কোনটা ভালো কোনটা মন্দ তা একটি শিশু সহজে বুঝতে পারে। ঠিক বয়ঃসন্ধিকালে ধর্মীয় শিক্ষার গুরুত্ব অনেক। কারণ, ওই সময়ে সে বিভিন্ন খারাপ বিষয়ের সাথে জড়িয়ে যেতে পারে। যদি তার মাঝে ধর্মীয় জ্ঞান থাকত, তাহলে সে কখনোই বুঝেশুনে খারাপ পথে যেত না। এজন্য প্রত্যেক মা-বাবার উচিত তাদের সন্তানের ধর্মীয় শিক্ষা যথাযথভাবে দেওয়া।

বিভিন্ন চিন্তাশীল কিছু করতে শেখা
বয়ঃসন্ধিকাল এমন একটা সময়, যে সময় নিজের শারীরিক পরিবর্তনের সাথে সাথে মানসিক পরিবর্তনও হয়। আর এই সময়ে তার মাথায় বিভিন্ন কিছু সৃষ্টি করার নেশা চেপে বসে। এজন্য তাকে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার পাশাপাশি নিজের মেধাশক্তিকে কাজে লাগানোর সুযোগ করে দিতে হবে। যদি লেখালেখির প্রতি ঝোঁক থাকে তাহলে লেখালেখি শুরু করা। রোবোটিকস, মহাকাশ নিয়ে কিছু করতে ভালো লাগলে সেই বিষয়গুলোর প্রতি কাজের আগ্রহ থাকতে হবে। আর সেই অনুযায়ী নিজের লক্ষ্যে এগিয়ে যেতে হবে।

বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে অংশ নেওয়া
প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার পাশাপাশি যেমন চিন্তাশীল হওয়া দরকার, তেমনই মনকে হাসিখুশি রাখতে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কাজে অংশ নেওয়া দরকার। স্কুলের কোনও অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করা। পাড়ার নাট্যক্লাবে বিভিন্ন নাটকের চরিত্রে অংশগ্রহণ করা। এ ছাড়া নাচ ও গান শেখা। সুন্দর করে আবৃত্তি শেখা। এগুলোর দক্ষতা থাকলে ছেলেমেয়েরা কখনও খারাপ পথে যেতে পারে না। পরবর্তী জীবন সুন্দরভাবে কাটানো যায়।

সর্বাধিক পঠিত