বিশ্বের সব দেশেরই কেন্দ্রীয় ব্যাংক আছে। একটি দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মূল কাজ হচ্ছে রাষ্ট্রের হয়ে মুদ্রা সরবরাহ ও সুদের হার ব্যবস্থাপনা করা। এছাড়া মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অন্যতম কাজ। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মাধ্যমেই দেশের অর্থনীতি ও মুদ্রাবাজার এবং ব্যাংকিং ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রিত হয়। বিশ্বের সিংহভাগ কেন্দ্রীয় ব্যাংক স্বাধীন, তবে সরকারের কাছে জবাবদিহি করতে হয়।
সব দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হাতেই স্বর্ণের মজুত, বৈদেশিক মুদ্রা, সরকারি বন্ড—এরকম সম্পদ থাকে। বিশ্বের অর্থনীতিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। তাই যেসব কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সম্পদের পরিমাণ যত বেশি, বিশ্ব অর্থনীতিতে ওই সব ব্যাংকের প্রভাবও তত বেশি। সম্পদের পরিমাণ থেকে বোঝা যায় আন্তর্জাতিক অর্থনীতিতে কোন দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রভাব কেমন।
বিশ্বের আর্থিক দৃশ্যপটে আধিপত্য বিস্তার করে রেখেছে বেশ কয়েকটি বড় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এই সবগুলো ব্যাংকই ক্ষমতাধর দেশগুলোর অর্থনীতির দায়িত্ব পালন করছে। এসব ব্যাংকের যেকোনো পদক্ষেপ প্রভাব ফেলতে পারে আন্তর্জাতিক আর্থিক ব্যবস্থাপনায়। চলুন জেনে নেওয়া যাক বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ১০টি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নাম। এ তালিকা প্রস্তুত করতে মার্কিন প্রতিষ্ঠান সভরেইন ওয়েলথ ফান্ড ইন্সটিটিউট-এর তথ্য ব্যবহার করা হয়েছে।
১. ফেডারেল রিজার্ভ
ফোর্বসের তালিকা অনুযায়ী বিশ্বের সবচেয়ে বড় অর্থনীতির দেশ যুক্তরাষ্ট্র। তার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সবচেয়ে ধনী কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তালিকায়ও সবার আগে আছে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভের নাম, যা কিনা ফেড নামেও পরিচিত। ফেডারেল রিজার্ভের মোট সম্পদের আর্থিক মূল্য প্রায় ৭.৮৩ ট্রিলিয়ন বা ৭ লাখ ৮৩ হাজার কোটি ডলার। উল্লেখ্য, ফোর্বসের তথ্যানুসারে, দেশটির জিডিপির আকার ২৮ হাজার ৭৮৩ বিলিয়ন ডলার। ফেডই সম্ভবত বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী কেন্দ্রীয় ব্যাংক। কেননা বিশ্বের সিংহভাগ আন্তর্জাতিক লেনদেনই হয় মার্কিন মুদ্রা ডলারে। তাই ফেডারেল রিজার্ভের যেকোনো সিদ্ধান্ত অনেক দেশের মুদ্রার দামের উত্থান-পতনে প্রভাব ফেলে।
উল্লেখ্য, ফেড প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯১৩ সালে। যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাংকিং ব্যবস্থা তদারকি ও মুদ্রা সরবরাহ নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব পালন করে এ প্রতিষ্ঠান।
২. ব্যাংক অব জাপান
ফোর্বসের র্যাঙ্কিং অনুসারে বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম অর্থনীতি জাপান। ফোর্বসের তথ্যানুসারে, দেশটির জিডিপির আকার ৪ হাজার ১১২ বিলিয়ন ডলার। বৃহৎ অর্থনীতির দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক, অর্থাৎ ব্যাংক অব জাপানের মোট সম্পদের পরিমাণ প্রায় ৫.৫ ট্রিলিয়ন ৫ লাখ ২১ হাজার কোটি ডলার।
ব্যাংক অব জাপান প্রতিষ্ঠিত হয় ১৮৮২ সালে। ব্যাংকটির মূল কাজ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখা, আর্থিক ব্যবস্থার স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা, বাজারে মুদ্রা ছাড়া, বৈদেশিক মুদ্রা মজুতের ব্যবস্থাপনা ও মুদ্রানীতি পরিচালনা করা।
ব্যাংক অব জাপানের মুদ্রানীতি কমিটিতে আছেন ব্যাংকটির গভর্নর, দুজন ডেপুটি গভর্নর এবং আরও ছয়জন সদস্য। প্রতিষ্ঠানটি ইচ্ছা করেই কৃত্রিমভাবে মার্কিন ডলার ও ইউরোর বিপরীতে নিজেদের মুদ্রার মান কমিয়ে রাখে।
৩. পিপলস ব্যাংক অব চায়না
বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি চীনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক সম্পদের দিক থেকে শীর্ষ ব্যাংকগুলোর তালিকায় তৃতীয় অবস্থানে আছে। ফোর্বসের তথ্যানুসারে, দেশটির জিডিপির আকার ১৮ হাজার ৫৩৬ বিলিয়ন ডলার।
পিপলস ব্যাংক অব চায়নার মোট সম্পদের পরিমাণ প্রায় ৫.১৪ ট্রিলিয়ন বা ৫ লাখ ১৪ হাজার কোটি ডলার। ব্যাংকটি প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৪৮ সালে। এ প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব মুদ্রানীতি প্রণয়ন ও তা বাস্তবায়ন করা, বাজারে মুদ্রা ছাড়া এবং দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ব্যবস্থাপনা। গত কয়েক বছরে চীনের অর্থনীতির আকার বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পিপলস ব্যাংক অভ চায়নার সম্পদও বেড়েছে।
৪. ডয়েশে বুন্ডেসব্যাংক
ইউরোপের সবচেয়ে বড় এবং বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ জার্মানি। ফোর্বসের তথ্যানুসারে, দেশটির জিডিপির আকার ৪ হাজার ৫৯০ বিলিয়ন ডলার। বৃহৎ অর্থনীতির দেশ জার্মানির কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডয়েশে বুন্ডেসব্যাংক। এ ব্যাংকের সম্পত্তির পরিমাণ প্রায় ২.৭৭ ট্রিলিয়ন বা ২ লাখ ৭৭ হাজার কোটি ডলার।
১৯৫৭ সালে প্রতিষ্ঠিত ডয়েশে বুন্ডেসব্যাংক ইউরোপের একক মুদ্রা ইউরো চালুর পেছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। জার্মানির মুদ্রানীতি প্রণয়ন করাই বুন্ডেসব্যাংকের মূল দায়িত্ব। এছাড়া ইউরোপিয়ান সেন্ট্রাল ব্যাংকের মুদ্রানীতি-সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণেও অংশ নেয় প্রতিষ্ঠানটি।
৫. ব্যাংক অব ফ্রান্স
ফোর্বসের তালিকায় বিশ্বের ৭ম বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ ফ্রান্স; দেশটির জিডিপির আকার ৩ হাজার ১৩২ বিলিয়ন ডলার। দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মোট সম্পদের পরিমাণ প্রায় ২ ট্রিলিয়ন বা ২ লাখ কোটি ডলার।
১৮০০ সালে প্রতিষ্ঠিত ব্যাংক অব ফ্রান্স বিশ্বের সবচেয়ে প্রাচীন কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর একটি। ফ্রান্সের মুদ্রানীতি প্রণয়ন এবং ইউরোপিয়ান সেন্ট্রাল ব্যাংকে মুদ্রানীতি-সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণে অংশ নেওয়া ব্যাংক অব ফ্রান্সের মূল দায়িত্ব।