০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪

ফিলিস্তিনের পক্ষে সোচ্চার দুই মার্কিন তারকা, কে এই জিজি ও বেলা হাদিদ?

কিশোর ডাইজেস্ট ডেস্ক
০৩ জুন ২০২৪, ০০:০২
জিজি হাদিদ ও বেলা হাদিদ। ছবি: সংগৃহীত

জিজি হাদিদ ও বেলা হাদিদ—দুই বোন, দু্ই মার্কিন তারকা। মডেলদের দুনিয়ায় দুই বোনই জগৎখ্যাত। শুরু থেকেই দুজন ফিলিস্তিনে ইসরায়েলি হামলার তীব্র সমালোচনা করে এসেছেন। বিভিন্নভাবে তারা ফিলিস্তিনের পাশে দাঁড়িয়েছেন। প্রতিবাদ করেছেন ইসরায়েলি হামলা ও গণহত্যার। এবার তারা ফিলিস্তিনে মানবিক কাজ করছে—এ রকম চারটি আন্তর্জাতিক সংস্থাকে ১০ লাখ ডলার বা প্রায় ১১ কোটি ৭৩ লাখ টাকা দেওয়ার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়েছেন। মানবিক কাজে তাদের উদ্যোগ সারা বিশ্বেই প্রশংসিত হয়েছে।

ডেলাইনসহ একাধিক আন্তর্জাতিক সংস্থা বলছে, এই টাকা শিগগিরই ফিলিস্তিনি শিশু ও পরিবারদের পুনর্বাসন, স্বাস্থ্য, চিকিৎসা, মৌলিক চাহিদা নিয়ে কাজ করে, এ রকম চারটি প্রতিষ্ঠানের অ্যাকাউন্টে যোগ হবে। সংস্থাগুলো হলো—হিল প্যালেস্টাইন, প্যালেস্টাইন চিলড্রেনস রিলিফ ফান্ড (পিসিআরএফ), ওয়ার্ল্ড সেন্ট্রাল কিচেন (ডব্লিউসিকে) ও ইউনাইটেড নেশনস রিলিফ অ্যান্ড ওয়ার্কস এজেন্সি (ইউএনআরডব্লিউএ)। ১০ লাখ ডলার সমানভাবে প্রতিষ্ঠানগুলোকে ভাগ করে দেওয়া হবে।

সুপারমডেল বেলা হাদিদ ও জিজি হাদিদের বাবা মোহাম্মদ হাদিদ ফিলিস্তিনি বংশোদ্ভূত মার্কিন ব্যবসায়ী। তিনি নাজারেথের রাজপুত্র এবং গালিলির শেখ দাহেল আল ওমরের বংশধর। প্রপার্টি ডেভেলপার ছাড়াও নানা ধরণের ব্যবসা আছে তার। জিজি ও বেলা হাদিদের মা ইয়োলান্ডা হাদিদ। তিনিও একসময় মডেলিং করতেন। নেদারল্যান্ডসের একটি ছোট কৃষক শহরে জন্ম এবং বেড়ে ওঠা ইয়োলান্ডা নিশ্চিতভাবেই অনেক দূর এসেছেন। প্রথম জীবনে প্যারিস, হামবুর্গ, মিলান, সিডনি, টোকিও এবং নিউইয়র্কে আন্তর্জাতিক মডেল হিসেবে কাজ করার পর ১৯৯৪ সালে লস এঞ্জেলেসে চলে আসেন। তারপর মোহাম্মদ হাদিদের সঙ্গে সংসার শুরু করেন।

বেলা আর জিজি দুজনেই ‘গর্বিত ফিলিস্তিনি’ হিসেবে নিজেদের পরিচয় দেন। সম্প্রতি ৭৭তম কান চলচ্চিত্র উৎসবের শেষ দিন ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার প্রতীক হিসেবে ‘স্কার্ফ কেফিয়াহ’ দিয়ে তৈরি একটি পোশাকে ভূমধ্যসাগরপাড়ে দেখা দেন বেলা। এভাবেই ফিলিস্তিনের পক্ষে নিজের শক্ত অবস্থান জানান দেন তিনি। এই পোশাক পরেই একটি প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে ছবি তুলেছেন, সেই ছবি ইনস্টাগ্রামে শেয়ার করে বেলা হাদিদ লিখেছেন, ‘ইটস ফ্রি প্যালেস্টাইন, টিল প্যালেস্টাইন ইজ ফ্রি’।

ইনস্টাগ্রাম পোস্টে বেলা লিখেছিলেন, ‘ইসরায়েল একমাত্র দেশ, যারা শিশুদের যুদ্ধবন্দী রাখে।’ পরে প্রবল তোপের মুখে পোস্টটি মুছে ফেলেন তিনি। এর আগেও গাজায় ইসরায়েলের হামলার সমালোচনা করে বিপাকে পড়েছিলেন বেলা। বেশ কিছু শো আর চুক্তিও বাতিল হয়েছিল। তবে তাতে ক্ষান্ত দেননি। পরিস্থিতি একটু স্বাভাবিক হয়ে এলেই নতুন করে একেক অভিনব উপায়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে নিজের অবস্থান জানান দেন তিনি।

কেফিয়াহ পোশাকে কয়েকটা ছবি পোস্ট করে ২৭ বছর বয়সী বেলা ইনস্টাগ্রামে তাঁর ৬ কোটি ১২ লাখ অনুসারীর উদ্দেশে লিখেছেন, ‘ফিলিস্তিন আমার হৃদয়ে, রক্তে, হৃৎপিণ্ডে। সব সময়ই থাকবে। এই ভয়াবহ সময়েও ফিলিস্তিনের ঐতিহ্যবাহী পোশাক আমাকে গর্বিত করে। এটা একটা কেফিয়াহ পোশাক। ২০০১ সালে পোশাকটি তৈরি করেন ফিলিস্তিনি ফ্যাশন ডিজাইনার হাসিদার মোর্তেজা। ইতিহাস, ভালোবাসা, ফিলিস্তিনের ঐতিহাসিক এমব্রয়ডারি আর প্রতিবাদ-প্রতিরোধ মিলে তৈরি হয়েছে এই পোশাক।’

অন্যদিকে জিজি তাঁর অবস্থান জানান দিয়েছিলেন আগেই। ফিলিস্তিনে যখন ইসরায়েলি হামলা শুরু হয়, সে সময়ই তিনি ইনস্টাগ্রামে লিখেছেন, ‘এটা একেবারেই অযৌক্তিক। এর চেয়ে জঘন্য অন্যায় আর নির্মম ট্র্যাজেডি আর হতে পারে না। চিন্তা করলেই অসুস্থ লাগে। এই সংঘাতে অসংখ্য নিরপরাধ মানুষ মারা পড়ছে, যাদের বেশির ভাগই নিষ্পাপ শিশু। ফিলিস্তিনের মানুষের প্রতি আমার হৃদয়ের গভীর থেকে সহমর্মিতা।’

বেলা হাদিদ ১৯৯৬ সালের ৯ অক্টোবর যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেসে জন্মগ্রহণ করেন। তার পুরো নাম ইসাবেলা খায়ের হাদিদ। মা ও বড় বোনের মতো তিনিও মডেলিং পেশা বেছে নেন। ব্যাপক পরিচিতি ও খ্যাতি অর্জন করেন। ২০১৯ সালে বিশ্বের সবচেয়ে সুন্দরী মডেল অ্যাখ্যায়িত হন বেলা হাদিদ। ‘গোল্ডেন রেশিও অব বিউটিফাই স্ট্যান্ডার্ডস’ জরিপে দেখা গেছে, সবচেয়ে নিখুঁত মুখশ্রীর অধিকারী তিনি। সেই জরিপে সবচেয়ে বেশি ৯৪ দশমিক ৩৫ শতাংশ নম্বর পেয়েছিলেন বেলা।

২০১৭ সালে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ আট দেশের নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের বিষয়ে তখনকার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পদক্ষেপের সমালোচনা করে হইচই ফেলে দেন বেলা হাদিদ। তিনি বলেছিলেন, একজন মুসলমান ও একজন শরণার্থীর মেয়ে হিসেবে তিনি গর্বিত।

একবার বাবার পাসপোর্টের ছবি শেয়ার করে বেলা ইনস্টাগ্রামে লিখেছিলেন, ‘আমি একজন গর্বিত ফিলিস্তিনি।’ ইনস্টাগ্রাম সেই ছবি মুছে দেয়। এতে ক্ষুব্ধ বেলা লিখলেন, ‘আমি কেবল বলেছি, আমার বাবার জন্ম ফিলিস্তিনে। সেই “অপরাধে” ইনস্টাগ্রাম আমার পোস্ট মুছে ফেলল? কোন অধিকারে? তাহলে কি ফিলিস্তিনের মানুষের জন্য ইনস্টাগ্রাম নয়? এভাবে মানুষের মুখ বন্ধ রাখা যাবে না। এভাবে ইতিহাস আর বর্তমানকে মুছে ফেলা যায় না।’ পরে অবশ্য ক্ষমা চেয়েছিল ইনস্টাগ্রাম কর্তৃপক্ষ।

সুপার মডেল জিজি হাদিদের পুরো নাম জেলেনা নোরা জিজি হাদিদ। তার জন্ম লস অ্যাঞ্জেলেসে, ১৯৯৫ সালের ২৩ এপ্রিল। অল্প বয়সেই মডেলিং শুরু করেন এবং ব্যাপক খ্যাতি অর্জন করেন। ২০১৩ সালে আন্তর্জাতিক মডেল পরিচালনা সংস্থা আইএমজি মডেলসের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হন। ২০১৪ সালের নভেম্বরে মডেলস ডটকম-এর সেরা ৫০ মডেলের তালিকায় স্থান করে নেন। ২০১৬ সালে ব্রিটিশ ফ্যাশন কাউন্সিল বছরের সেরা আন্তর্জাতিক মডেল হিসেবে নির্বাচন করে তাকে। ২০১৩ সালে একজন ফুল-টাইম মডেল হিসেবে নাম লেখানোর পর জিজি শুধু ভোগ ম্যাগাজিনের প্রচ্ছদেই জায়গা পেয়েছেন ৩৫ বার। বর্তমান বিশ্বে সবচেয়ে বেশি পারিশ্রমিক পাওয়া মডেলদের একজন তিনি। 

সর্বাধিক পঠিত