০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪

৪২ হাজার ফুট উচ্চতা থেকে লাফ দিয়ে রেকর্ড আশিকের, জানালেন দুঃসাহসিক অভিযানের গল্প

কিশোর ডাইজেস্ট ডেস্ক
১০ জুন ২০২৪, ১৫:৫৯
৪২ হাজার ফুট উচ্চতা থেকে লাফ দিয়ে রেকর্ড আশিক চৌধুরীর। ছবি: সংগৃহীত

প্রায় ৪২ হাজার ফুট উচ্চতা থেকে শূন্যে লাফ দেওয়ার পর সবকিছু ঠিক থাকলেও প্যারাশুট ওড়ানোর সময় বেঁধে যায় বিপত্তি। বারবার পাক খাওয়ায় কারণে পেঁচিয়ে যায় প্যারাশুটের ২৮টি দড়ি। এরপর ৩০ সেকেন্ড উল্টো ঘুরে সেই প্যাঁচ খুলে সফলভাবে বাংলাদেশের পতাকা হাতে মাটিতে নামেন আশিক চৌধুরী। গিনেস রেকর্ড গড়তে স্কাইডাইভিংয়ের দুঃসাহসিক অভিযানের এমনই গল্প শোনালেন এই বাংলাদেশি যুবক।  

পেশায় ব্যাংকার হলেও ২০১২ সাল থেকে স্কাইডাইভ করে সিদ্ধহস্ত হয়েছেন আশিক। অনেকবারই বিভিন্ন উচ্চতা থেকে লাফ দিয়েছেন তিনি। তবে এবারের লক্ষ্য ছিল সর্বোচ্চ উচ্চতা থেকে লাফ দিয়ে রেকর্ড গড়ার। ঢাকার গুলশানে ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের (ইউসিবি) অফিসে সম্প্রতি  এক সংবাদ সম্মেলনে স্কাইডাইভিংয়ের অভিজ্ঞতা ভাগ করে নেন তিনি।

আশিক জানান, ছয় মাস ধরে প্রস্তুতি নেওয়ার পর গত ২৫ মে যুক্তরাষ্ট্রের মেমফিসে বিমানে ৪১ হাজার ৭৯৫ ফুট উচ্চতায় উঠে লাফ দেন। তার হাতে ছিল প্রায় ৭ বর্গফুট লম্বা বাংলাদেশের লাল-সবুজের পতাকা। তার দাবি, বায়ুমণ্ডলের স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারে এখন পর্যন্ত সব থেকে বড় পতাকা ওড়ানোর ঘটনা এটি। ‘পাইপার পিএ-ফরটি টু’ মডেলের একটি বিমান থেকে লাফ দেওয়ার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, মাটিতে নেমে আসতে তার সময় লাগে তিন মিনিট। তার এই অভিযানে সহযোগী হিসেবে ছিল ইউসিবি। খরচ পড়েছে ৩০ থেকে ৪০ হাজার ডলার।

আশিক বলেন, “আমার জন্য মোট তিনটি পতাকা বিশেষভাবে তৈরি করা হয়েছিল। এর মধ্যে একটি আমি প্র্যাক্টিস জাম্পে হারিয়েছি, দ্বিতীয়টি মূল জাম্পে হারিয়েছি, আর শেষটি এখন আমার হাতে। পতাকাটি সাধারণভাবে তৈরি নয়। মূলত আর্মি প্যারাশুটাররা এমন কাপড়ের পতাকা উড়িয়ে থাকেন। তিনি বলেন, “এছাড়া এত উচ্চতায় পতাকা মেলে ধরতে ও সামলাতে বিশেষভাবে ডিজাইন করতে হয়। বিমান থেকে লাফ দেওয়ার পর ৩৭ হাজার ২৯৭ ফুট উচ্চতায় নেমে এসে পতাকা মেলে ধরি।”

সংবাদ সম্মেলনে আশিক চৌধুরী। ছবি: সংগৃহীত

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, এ ধরনের স্কাইডাইভকে বলা হয়ে থাকে ‘হাই অলটিটিউড লো ওপেনিং’। স্কাইডাইভের সময় বিমানবন্দরে বিমান ওঠানামাও এক ঘণ্টার জন্য বন্ধ রাখা হয়। ফাইটার পাইলটদের জন্য তৈরি বিশেষ হেলমেট, অক্সিজেন মাস্ক, ১২ মিনিট ব্যবহারের জন্য অক্সিজেন ট্যাংক, মাইনাস ৭১ ডিগ্রি তাপমাত্রার জন্য থার্মাল কিট ও প্রেসার স্যুট পরে লাফ দিতে হয়। লাফ দেওয়ার এক ঘণ্টা আগে থেকে বিমানে বসে বিশুদ্ধ অক্সিজেন গ্রহণ করেন তিনি।

লাফ দেওয়ার ২০ সেকেন্ডের মধ্যে আশিকের সর্বোচ্চ গতি ছিল ঘণ্টায় ৩১৪ কিলোমিটার। ৩৭ হাজার ২৯০ ফুট উচ্চতা অতিক্রমের পর ৪ হাজার ৪৯৮ ফুট উচ্চতা থেকে তিনি প্যারাসুট ব্যবহার করেন।

তবে তিন মিনিটের সেই অভিযানের অভিজ্ঞতা সহজ ছিল না বলে জানান আশিক। তিনি বলেন, “মূল ডাইভিংয়ের ২৪ ঘণ্টা আগেও ১৬ হাজার ফুট থেকে লাফ দিই। সেটা ভালোভাবে সম্পন্ন হওয়ায় আত্মবিশ্বাস বেড়ে যায় পুরো দলের। তিনি বলেন, “স্কাইডাইভের সময় এত ওপরে বাতাস না থাকায় শরীরের কোনো নিয়ন্ত্রণ ছিল না। ফলে ৭ হাজার ফুট উচ্চতার পরই পাক খেতে শুরু করি। হাতে থাকা আলটিমিটার ও কানে থাকা অডিবাল সেন্সরে (৯ হাজার ফুট থেকে সিগনাল দেয়) কিছুই দেখতে ও শুনতে পাইনি। দৃষ্টিশক্তি কাজে লাগিয়েই নিচে নামতে হয়। তবে পাক খাওয়ার কারণে প্যারাশুট খুলতেও বেগ পেতে হয়।”

আশিকের ভাষ্য, “পাক খাওয়ার কারণে প্যারাশুটের ২৮টি দড়ি পেঁচিয়ে গিয়েছিল। ফলে ৩০ সেকেন্ড উল্টো দিকে ঘুরে ঘুরে আবার সেই প্যাঁচ খুলতে হয়েছিল আমাকে। যার কারণে নামার নির্ধারিত স্থান থেকে তিন-চার মিটার দূরে গিয়ে পড়ি এবং কানসহ শরীরের বিভিন্ন অংশে আঘাতও পাই।”

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, অ্যারোনটিক্যাল রেকর্ডের স্বীকৃতি দেওয়া সংস্থা ‘এফএআই ওয়ার্ল্ড এয়ার স্পোর্টস ফেডারেশনের’ এক বিচারক স্কাইডাইভটি পর্যবেক্ষণ করেন। অনানুষ্ঠানিকভাবে এখন পর্যন্ত এটিই ‘রেকর্ড’। তবে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতির জন্য গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস কর্তৃপক্ষের কাছে তথ্য-উপাত্ত পাঠানো হয়েছে।

আশিক বলেন, “জানি এই রেকর্ডটি সামনের পাঁচ বছরের মধ্যেই কেউ ভেঙে ফেলবে। আর আমার বিশ্বাস, এই রেকর্ড ভাঙতে শুধু প্রয়োজন সৎ সাহস।”

সর্বাধিক পঠিত