১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪

চীনের সরকারি বৃত্তি পেতে চাইলে যা করবেন

জীবন কুমার সরকার
০৮ অগাস্ট ২০২৪, ২০:১২
মো. আলী ইমাম। ছবি: সংগৃহীত

চীনা সরকারের বৃত্তি পেয়েছেন নাটোর কাদিরাবাদ ক্যান্টনমেন্ট স্যাপার কলেজের প্রাক্তন শিক্ষার্থী মো. আলী ইমাম। তিনি সাংহাই ইউনিভার্সিটি অব ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইকোনমিকসে এক বছর চায়নিজ ল্যাঙ্গুয়েজ অ্যান্ড কালচার কোর্স করে অর্থনীতিতে স্নাতক করবেন। ফুল ফান্ডেড এই বৃত্তির পাশাপাশি প্রায় ৪০ হাজার টাকা মাসিক ভাতা, হেলথ ইনস্যুরেন্স, আবাসন ও এয়ার টিকিট-সুবিধাও পাচ্ছেন তিনি। তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন জীবন কুমার সরকার

প্রশ্ন: চীনে কেন ভর্তির সিদ্ধান্ত নিয়েছেন?
উত্তর: বেশ কয়েকটি কারণ রয়েছে। প্রথমত, এখানে অভিজ্ঞতা অর্জনের অপার সম্ভাবনা রয়েছে। চীনের বৈশ্বিক অবস্থান থেকে এতটুকু স্পষ্ট যে দেশটি উদীয়মান অর্থনৈতিক দেশ। ১৯৭৮ সালে দেং জিয়াওপিংয়ের হাত ধরে শুরু হয় এই অগ্রগতি এবং প্রায় ৫০ বছর ধরে চলমান। যেহেতু অর্থনীতি বিষয়ে স্নাতক সম্পন্ন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি, সেহেতু চীনের অর্থনৈতিক উন্নয়নের এই অগ্রযাত্রা একদম কাছ থেকে দেখার ইচ্ছা বরাবরই আমার ছিল। বস্তুত পারিপার্শ্বিক অভিজ্ঞতার আলোকে শিক্ষাগ্রহণ প্রাতিষ্ঠানিক জ্ঞান আরও সুন্দরভাবে উপলব্ধি করতে এবং বাস্তব জীবনে কাজে লাগাতে সহযোগিতা করে। চীনে তাত্ত্বিক এবং ব্যবহারিক জ্ঞান একসঙ্গে অর্জনের সুযোগ আমার শিক্ষাজীবনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

দ্বিতীয়ত, ইতিহাস এবং আধুনিকতার সংমিশ্রণ। তথ্যপ্রযুক্তির ক্রমবর্ধমান বিকাশের ফলে এ দেশকে বৈশ্বিক অর্থনীতিতে আমূল এক পরিবর্তন এসেছে। এই পরিবর্তন আধুনিক ধারার বিভিন্ন তাত্ত্বিক চিন্তাভাবনাকে আলোচ্য বিষয় হিসেবে উপস্থাপন করছে। উদাহরণস্বরূপ বলা যেতে পারে, ‘নিউ স্ট্রাকচারাল ইকোনমিকস’-এর কথা।

বিশ্বের অন্য অনেক দেশের তুলনায় চীনের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এই আধুনিকতার চর্চাকে বেশি মাত্রায় প্রাধান্য দিচ্ছে। একই সঙ্গে পৃথিবীর অন্যতম প্রাচীন সভ্যতার দেশ চীনের ইতিহাস এবং সংস্কৃতি থেকে আমাদের অভিজ্ঞতা অর্জনের এক অপার সম্ভাবনা রয়েছে। চীনারা তাদের নিজস্ব সভ্যতার বিকাশ, সংস্কৃতি এবং ভাষাকে ব্যাপক মাত্রায় প্রাধান্য দিয়ে থাকে। ইতিহাস এবং আধুনিকতার এই মিশেল বিশ্ব দরবারে চীনকে একটি অনন্য দেশ হিসেবে উপস্থাপন করেছে।

তৃতীয়ত, শিক্ষার মান এবং গুণগত দিক বিবেচনায় চীন বর্তমানে বিশ্বের অন্যতম সেরা একটি দেশ। শিক্ষকদের আন্তরিকতা এবং পেশাদারি ইতিমধ্যে যারা অধ্যয়ন করেছেন বা করছে, সবাইকে মুগ্ধ করেছে। বর্তমানে তথ্যপ্রযুক্তির আবিষ্কার এবং গবেষণা বিষয়ে তারা এগিয়ে যাচ্ছে। রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টে বিনিয়োগের দিক থেকে চীন বিশ্বে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে। আমরা যারা গবেষণাধর্মী এবং উন্নতমানের প্রযুক্তিগত জ্ঞান অর্জন করতে চাই, চীন তাদের জন্য হতে পারে একটি উপযুক্ত দেশ। ভর্তির সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে এ বিষয়গুলো আমাকে ভালোভাবেই প্রভাবিত করেছে।

প্রশ্ন: চীনা সরকারি বৃত্তির কথা প্রথম কোথায় শুনেছেন?
উত্তর: ইউটিউবের মাধ্যমে। পরে বাংলাদেশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে প্রকাশিত একটি সার্কুলারের মাধ্যমে বিস্তারিত জেনেছি।

প্রশ্ন: এই বৃত্তির আবেদন করতে কী কী ডকুমেন্ট লেগেছে?
উত্তর: আবেদনের ক্ষেত্রে প্রায় ১৫টি ডকুমেন্টের ব্যাপারে উল্লেখ থাকলেও যেসব ডকুমেন্ট অবশ্যই লাগবে, সেগুলো হলো:
১. ফরমাল ছবি (পাসপোর্ট সাইজের সাদা ব্যাকগ্রাউন্ড সংবলিত, কন্টাক্ট লেন্সবিহীন এবং কান দৃশ্যমান রয়েছে এমন)।
২. সর্বোচ্চ শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ (নোটারাইজড)।
৩. সর্বোচ্চ শিক্ষাগত যোগ্যতার ট্রান্সক্রিপ্ট (নোটারাইজড)।
৪. পাসপোর্ট।
৫. স্টেটমেন্ট অব পারপাস/স্টাডি প্ল্যান।
৬. দুটি রেকমেন্ডেশন লেটার (সর্বশেষ অধ্যয়ন করেছেন এমন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের কাছ থেকে সংগ্রহ করতে পারেন)।
৭. ফিজিক্যাল এক্সামিনেশন রিপোর্ট ফর ফরেনার্স (ফরমটি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সার্কুলারের সঙ্গেই সংযুক্ত করা থাকে। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দ্বারা পূরণ করতে হবে এটি)।
৮. পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট।
৯. চাইনিজ ল্যাঙ্গুয়েজ প্রফিশিয়েন্সি সার্টিফিকেট (যদি থাকে)।
১০. ইংলিশ ল্যাঙ্গুয়েজ প্রফিশিয়েন্সি সার্টিফিকেট (যদি থাকে)।
এ ছাড়া সাপোর্টিং ডকুমেন্টস হিসেবে সহশিক্ষা কার্যক্রমের সার্টিফিকেট, রিসার্চ আর্টিকেল কিংবা বিভিন্ন শিল্প-সংস্কৃতি-সম্পর্কিত আপনার অর্জনগুলো জমা দিতে পারেন। যেগুলো আপনাকে অন্যদের চেয়ে এগিয়ে রাখবে।

সর্বাধিক পঠিত