১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪

যেভাবে যুক্তরাষ্ট্রে সাড়ে তিন কোটি টাকার স্কলারশিপ পেলেন ক্যাডেট রিদম

সিফাত রাব্বানী
১৪ অগাস্ট ২০২৪, ১০:৩৮
রুবায়তুল এহসান রিদম। ছবি: ফেসবুক

ফৌজদারহাট ক্যাডেট কলেজে দশম শ্রেণিতে পড়ার সময়ই বিদেশে উচ্চশিক্ষার স্বপ্ন দেখেন রুবায়তুল এহসান রিদম। এরপর একক প্রচেষ্টায় স্বপ্নপূরণের পথে হাঁটেন। পরিবারের শত আপত্তি সত্ত্বেও নিজের স্বপ্ন ধরায় ছিলেন অবিচল। অতঃপর তার স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের গেটিসবার্গ কলেজ থেকে পেয়েছেন সাড়ে তিন কোটি টাকার প্রেসিডেন্সিয়াল স্কলারশিপ। তার সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সিফাত রাব্বানী।  

কিশোর ডাইজেস্ট: কখন ভাবলেন দেশের বাইরে যাবেন?
রুবায়তুল এহসান রিদম: ছোটবেলায় হলিউড মুভি এবং কার্টুনের ভক্ত ছিলাম। ভাবতাম আমি কবে যাব আমেরিকায়। এ দেশ ঘুরে দেখব। তবে দেশের বাইরে যাওয়ার চিন্তা মাথায় আসে দশম শ্রেণিতে এক সিনিয়র ভাইকে দেখে, যিনি আমার মতোই ক্যাডেট কলেজের একজন ছাত্র ছিলেন।

কিশোর ডাইজেস্ট: কবে থেকে বিদেশে উচ্চশিক্ষার জন্য প্রস্তুতি শুরু করেছিলেন?
রুবায়তুল এহসান রিদম: অনেকে মনে করে থাকেন বিদেশে উচ্চশিক্ষার জন্য আবেদন করা মাসখানেকের ব্যাপার, আবার জিজ্ঞেসাও করে কদিন লেগেছিল আবেদন করতে। তবে আমার জন্য এই আবেদন প্রক্রিয়ার প্রস্তুতি নিতে সময় লেগেছে দীর্ঘ ৪ বছর, শুরু হয় ২০১৯ সাল থেকে, যখন আমি দশম শ্রেণিতে ছিলাম। আমার সম্পূর্ণ প্রোফাইল, প্রাতিষ্ঠানিক ফলাফল, সম্মাননা/পুরস্কার, রচনা, স্যাট, আইএলটিএস এবং পাঠ্যক্রমবহির্ভূত কার্যক্রম এসব গুছিয়ে উঠতেই ৪ বছর লেগেছে।

রুবায়তুল এহসান রিদম। ছবি: ফেসবুক

কিশোর ডাইজেস্ট: আপনার প্রোফাইল কীভাবে সাজিয়েছেন?
রুবায়তুল এহসান রিদম: দশম শ্রেণি থেকেই কাজ শুরু করি প্রোফাইল গোছানোর, মূলত কিছু পাঠ্যক্রমবহির্ভূত কার্যক্রম গড়ে তোলা। ক্লাসের ফাঁকে ফাঁকে কম্পিউটার ক্লাসে বসে চেষ্টা করতাম কিছু স্কিল ডেভেলপমেন্ট কোর্স করার, নিজের প্রতিভাগুলোকে বিকশিত করার। কাজ করেছি কয়েকটি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান, স্কিল ডেভেলপমেন্ট প্ল্যাটফর্ম, ইয়ুথ অর্গানিজশন এবং রিসার্চ টিমের সঙ্গে। চেষ্টা করতাম বাইরের স্কুল-কলেজের কিংবা কোনো জাতীয় প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়ার। ২০২৩ সালে শুরু করি রচনা, স্যাট, আইএলটিএস, রেকমেন্ডেশন লেটার এবং এপ্লিকেশনের কাজ।

কিশোর ডাইজেস্ট: বিদেশে উচ্চশিক্ষার প্রস্তুতির সময় কারও সহযোগিতা পেয়েছেন?
রুবায়তুল এহসান রিদম: অন্যান্য স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা যারা দেশের বাইরে যেতে চায় এবং প্রস্তুতি নিচ্ছে, তাদের পরিস্থিতি আর আমার পরিস্থিতি এক রকম ছিল না। একদিকে ক্যাডেট কলেজে পড়ি দেখে পরিবারসহ আত্মীয়-স্বজন সবাই চাইত সামরিক বাহিনীতে যোগদান করি, অন্যদিকে ক্যাডেট কলেজের ছাত্রদের মধ্যে বিদেশে যাওয়ার প্রচলন খুব কমই ছিল। না ছিল উৎসাহ দেওয়ার মতো কেউ, না ছিল দিকনির্দেশনা দেওয়ার মতো। না ছিল মোবাইল ফোন, কম্পিউটার বা ইন্টারনেট ব্যবহারের সুবিধা, ছিল না কোনো জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার সুযোগ। এতকিছুর মাঝেও স্বপ্ন দেখেছি, চেষ্টাও করেছি।

কিশোর ডাইজেস্ট: বিদেশে যাওয়া নিয়ে আপনার কোনো ভ্রান্ত ধারণা ছিল?
রুবায়তুল এহসান রিদম: অনেকেই মনে করি যে, বিদেশে উচ্চশিক্ষার জন্য প্রচুর অর্থ ঢালতে হয়, স্নাতকের জন্য আবেদন করলে স্কলারশিপ পাওয়াই যায় না, চান্স পাওয়া কঠিন, শুধু আইএলটিএস দিলেই বিদেশে স্কলারশিপ দেয়, ইংলিশ মিডিয়াম ছাড়া কাউকে নেওয়া হয় না। আসলে সে রকমটা নয়। যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, চীন, কোরিয়া, কাতারসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশ ছাত্রদের প্রতি বছরই বিপুল পরিমাণ স্কলারশিপ দেয়। আমরা অনেকেই আমেরিকাতে আবেদন করি না অনেক ব্যয়বহুল মনে করে, তবে আমেরিকাই সারা বিশ্বে সবচেয়ে বেশি স্কলারশিপ দিয়ে থাকে ছাত্রদের।

কিশোর ডাইজেস্ট: কলেজের বাইরের প্রতিযোগিতাগুলোতে কীভাবে অংশগ্রহণ করতেন?
রুবায়তুল এহসান রিদম: প্রতি ছুটিতেই চেষ্টা করতাম বাইরের স্কুল-কলেজের কিংবা কোনো জাতীয় প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার। কলেজ থেকেই দুই-তিন দিনের ছুটি নিয়ে চলে আসতাম ঢাকায়, পুরস্কার জেতা ও কিছু শিখবার আশায়। করোনার সময়ও থেমে থাকিনি। অংশ নিয়েছি নানা রকম অনলাইন প্রতিযোগিতায়। একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণিতে থাকতে অংশ নেই কিছু আন্তর্জাতিক পর্যায়ের প্রতিযোগিতায়। এভাবে করেই আজ পর্যন্ত সর্বমোট ৬০টিরও বেশি প্রতিযোগিতায় পুরস্কার পেয়েছি।

কিশোর ডাইজেস্ট: বিদেশে উচ্চশিক্ষার জন্য কী কী কাগজপত্র গুছিয়ে রাখা প্রয়োজন?
রুবায়তুল এহসান রিদম: প্রাতিষ্ঠানিক ফলাফল, সম্মাননা/পুরস্কার, রচনা, স্যাট, আইএলটিএস, রেকমেন্ডেশন লেটার এবং পাঠ্যক্রমবহির্ভূত কার্যক্রম। এছাড়া আলাদা যে কোনো কিছুই দেখানো যেতে পারে, যেমন আমার একটা নিজস্ব ওয়েবসাইট ছিল।

কিশোর ডাইজেস্ট: কেন এই কলেজ বেছে নিলেন?
রুবায়তুল এহসান রিদম: গেটিসবার্গ কলেজ আমেরিকার শীর্ষ ইউনিভার্সিটি এবং কলেজগুলোর মধ্যে ৬৩তম স্থানে অবস্থিত। এরই পাশাপাশি, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ‘স্টাডি এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রাম’ এর দিক দিয়ে পুরো আমেরিকায় তৃতীয়। এটি একটি লিবারেল আর্টস কলেজ, যেখানে একই সঙ্গে ২টি বা ৩টি বিষয়ে একই সঙ্গে অধ্যয়ন করা যাবে এবং প্রথম বছর পর্যন্ত যে কোনো সময় বিষয় পরিবর্তন করা যাবে। এছাড়াও রিসার্চ, কমিউনিটি, ক্লাসরুম, বাসস্থান, পরিবেশ সবকিছুর দিক থেকেই গেটিসবার্গ কলেজ অনন্য। গেটিসবার্গ কলেজ আমাকে চার বছরের জন্য সর্বমোট সাড়ে তিন কোটি টাকা সমমূল্যের স্কলারশিপ দিয়েছে যা আমার টিউশন ফি, ইন্স্যুরেন্স এবং অন্যান্য সব ফি কভার করবে।

কিশোর ডাইজেস্ট: তরুণদের স্বপ্নপূরণে ভেঞ্চার এডুকেশন প্ল্যাটফর্ম করেছেন। এটা নিয়ে কিছু বলুন।
রুবায়তুল এহসান রিদম: কিছু উৎসাহী শিক্ষার্থীকে যুক্তরাষ্ট্রে আবেদন প্রক্রিয়ায় সাহায্য করতে বন্ধুদের নিয়ে গড়ে তুলেছি ‘ভেঞ্চার এডুকেশন’ নামে একটি প্ল্যাটফর্ম; যেখানে উচ্চশিক্ষায় বিদেশ গমন এবং আবেদন প্রক্রিয়া সম্পর্কিত সহায়তা করা হয় বিনামূল্যে! কারণ আমরা চাই, আমাদের মতো প্রতিটি স্বপ্নবাজের স্বপ্নই যেন সত্যি হয়! 

সর্বাধিক পঠিত