০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪
সাক্ষাৎকার : সাদিয়া তাসনীম

পরীক্ষার আগের স্নায়ুচাপ কমাতে দরকার আত্মবিশ্বাস

সাখাওয়াত হোসাইন
২৬ ডিসেম্বর ২০২৩, ১৬:০৫
ঢাকা মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী সাদিয়া তাসনীম। অলংকরণ : কিশোর ডাইজেস্ট

সরকারি-বেসরকারি মেডিকেল কলেজের ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের এমবিবিএসে ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে আগামী ৯ ফেব্রুয়ারি।  কেন্দ্রে এক ঘণ্টার মেধার যুদ্ধে সাফল্যের মাধ্যমে নির্ধারিত হবে মেডিকেল ভর্তিচ্ছুদের স্বপ্ন ছোঁয়ার গল্প। তুমুল প্রতিযোগিতার এ সংক্ষিপ্ত সময়টির যথাযথ ব্যবহার ও শেষ সময়ে পরীক্ষার প্রস্তুতির নানা কৌশল নিয়ে কথা বলেছেন ২০২১-২২ সেশনের ভর্তি পরীক্ষায় জাতীয় মেধায় চতুর্থ সাদিয়া তাসনীম। বর্তমানে তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী। ভর্তিচ্ছুদের করণীয় ও বর্জনীয় নিয়ে কথা বলার পাশাপাশি দিয়েছেন বিভিন্ন মূল্যবান পরামর্শ। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সাখাওয়াত হোসাইন। উল্লেখ্য, মেডিভয়েস পোর্টালের সৌজন্যে পত্রস্থ হলো সাদিয়া তাসনীমের সাক্ষাৎকার।

শেষ পর্যায়ে মেডিকেল ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের কোন কোন বিষয়গুলোতে গুরুত্ব দিতে হবে?

সাদিয়া তাসনীম : মেডিকেলের ভর্তি পরীক্ষায় বায়োলজি, ফিজিক্স, কেমিস্ট্রি ও ইংরেজি আর জিকে এগুলো থেকে আসে। মেডিকেলের রেজাল্ট বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, খুব অল্প ব্যবধানে ভর্তির সুযোগ হয় না বা হলেও নিজের পছন্দের মেডিকেলে সুযোগ হয় না। শিক্ষার্থীদের জন্য প্রত্যেকটা বিষয়ই গুরুত্বপূর্ণ, তবে সব বিষয়ের সব টপিকই গুরুত্বপূর্ণ নয়। আর শেষ সময়ে বিশ্লেষণ করে দেখতে হবে, কোন টপিক থেকে বিগত বছরে বেশি প্রশ্ন এসেছে। যেখান থেকে বেশি প্রশ্ন এসেছে, সেখানে গুরুত্ব দিতে হবে। তারপর সময় করে অন্য যেসব জায়গা থেকে প্রশ্ন আসার সম্ভাবনা আছে, সেই টপিকগুলো ভালো করে পড়তে হবে।

এই সময়ে আপনার প্রস্তুতি এবং রুটিন কেমন ছিল, জানতে চাই।

সাদিয়া তাসনীম : শেষ সময়ে আমি নিয়মিত পরীক্ষা দিয়েছি। চেষ্টা করেছি, খুব গুরুত্ব সহকারে দেওয়ার জন্য। আর একদম শেষ সময়ে রুটিন করে পূর্বে যেসব পড়াগুলো পড়েছি এবং দাগিয়ে রেখেছি, গুরুত্বপূর্ণ জায়গাগুলো মার্ক করে রিভিশন দিয়েছি। শেষের দিনগুলোতে আমি সময় ভাগ করে নিয়েছি, কোন সময়ে সময়ে কোনটা পড়ব। পড়াগুলোর রিভিশন শেষ করেছি। আর সাধারণ জ্ঞান আর ইংরেজি রোজই পড়ার চেষ্টা করতাম।

পরীক্ষার আগের রাত এবং সকালে কেন্দ্রে পৌঁছা পর্যন্ত একজন শিক্ষার্থীর করণীয় সম্পর্কে বলুন।

সাদিয়া তাসনীম : পরীক্ষার আগের রাতে মানসিকভাবে চাপুমক্ত ও নির্ভার থাকা অনেক বেশি জরুরি। কারণ, ইতিমধ্যে শিক্ষার্থীরা প্রস্তুতি নিয়ে ফেলেছে এবং মাথায় যা আছে, তাই কাজে লাগবে। শিক্ষার্থীরা নিজের সর্বোচ্চ চেষ্টা করে পড়াশোনা করেছে। পরীক্ষার আগের রাতে হায় হায় এখনও অনেক জায়গা বাকি, এটা ভুলে গেলাম কিনা, এটা মনে থাকবে কিনা—এ ধরনের চিন্তা না করে রাতে চাপমুক্ত থাকতে হবে। আর রাতের মধ্যেই প্রবেশপত্র ও অন্যান্য কাগজপত্র গুছিয়ে রাখতে হবে। সেইসাথে পরীক্ষার আগের দিন রাতে খুব তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে যেতে হবে। পরীক্ষার আগের রাতে ভালো ঘুম গুরুত্বপূর্ণ। সকালে উঠে পরিবারের সবার দোয়া নিয়ে এবং সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করে পরীক্ষার কেন্দ্রে যেতে হবে।

পরীক্ষার কেন্দ্রে টাইম ম্যানেজমেন্টটা কেমন হওয়া জরুরি?

সাদিয়া তাসনীম : মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় ১০০টি প্রশ্নের জন্য ৬০ মিনিট থাকে। চেষ্টা করতে হবে ৪০ বা ৪৫ মিনিটের মধ্যে একবার টেনে যাওয়ার। আর যে প্রশ্নটা পারা যাচ্ছে না, সেখানে সময় নষ্ট না করে, সেটাকে চিহ্নিত করে রেখে চলে যেতে হবে, পরবর্তীতে সেটার উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করতে হবে। দেখা যাবে, প্রথম চান্সে অনেক কিছুই মনে পড়ছিল না, হয়তো কেউ ৭০টি বা ৮০টি দাগিয়ে ফেলা হয়েছে। আর বাকিগুলো চিহ্নিত করে রাখতে হবে। তাতে দ্বিতীয়বার দেখা যাবে, অনেক কিছুই মনে পড়ছে, তখন সেগুলোর উত্তর দিতে হবে। আর যেসব প্রশ্ন এখনও দেখা যায়নি বা পড়োনি, সেগুলো না দাগানোই ভালো। আর যেগুলো পারছো, সেগুলো দাগিয়ে আসতে হবে।

যে কোনও প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় একটু স্নায়ুচাপ থাকে, পরীক্ষার আগে মানসিক চাপ কমাতে কী পরামর্শ দেবেন? চাপ সামলানোর কৌশল কী?

সাদিয়া তাসনীম : পরীক্ষার আগের স্নায়ুচাপ কমাতে দরকার আত্মবিশ্বাস। এ ছাড়া দরকার ভালো প্রস্তুতি। আমরা যেমন ফলাফল প্রত্যাশা করি, সে রকম প্রস্তুতি না হলে স্নায়ুচাপ বেড়ে যাওয়াটা স্বাভাবিক। এর জন্য প্রথম থেকেই চেষ্টা করতে হবে ভালো প্রস্তুতি নেওয়ার। যেমন ফলাফল প্রত্যাশা করি, প্রস্তুতিও যেন সে রকম হয়। তবে অনেক সময় এমন হয় ভালো প্রস্তুতি, সব কিছুই হচ্ছে, তারপরও মনে হচ্ছে যদি অন্যরকম কিছু হয়ে যায় বা চান্স না হয় বা আশানুরূপ ফলাফল না হয়। সেক্ষেত্রে নিজের ওপর এবং সৃষ্টিকর্তার ওপর ভরসা করতে হবে। পরীক্ষার হলে চেষ্টা করতে হবে, যা পারি, তার সবটুকু দিতে হবে।

প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার আগের রাতে বা কিছুদিন আগে সামাজিক বিভিন্ন মাধ্যমে ভুয়া প্রশ্ন ফাঁসের গুজব ছড়িয়ে পড়ে। এ ব্যাপারে একজন মনোযোগী শিক্ষার্থীর করণীয় কী?

সাদিয়া তাসনীম : ব্যক্তিগতভাবে আমি আমার কথা বলতে পারি, মেডিকেলে ভর্তির আগে এবং পরে আমার কোনও ফেসবুক আইডি ছিল না। বাবার ফেসবুক আইডি ব্যবহার করতাম। ফলে এই ধরনের খবর আগের দিন শোনার মতো সময়ই ছিল না। আর যারা পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছ, নিজেদের প্রতি আত্মবিশ্বাস থাকতে হবে। প্রশ্ন ফাঁস বা গুজব—এগুলোতে কান দেওয়া যাবে না।

যারা ডিএমসিতে চান্স পেতেই চায়, তাদের জন্য কারণীয় কী হবে?

সাদিয়া তাসনীম : যারা ঢাকা মেডিকেল কলেজে (ডিএমসি) সুযোগ পেতেই চাও, তাদেরকে বলব, তোমরা তো ইতিমধ্যে সেভাবেই প্রস্তুতি নিয়েছ। তোমাদের এই স্বপ্ন আজকে থেকে না, এই স্বপ্ন অনেক আগে থেকেই। ইন্টারমিডিয়েটে ভালো করে পড়াশোনা করেছে। আর ডিএমসিতে চান্স পাওয়ার মতো একটা পরীক্ষা দেওয়া যায়, তোমরা সেভাবেই প্রস্তুতি নিয়েছ। গুছিয়ে রাখা পড়াগুলো ভালো করে রিভিশন দিতে হবে।

প্রস্তুতির বাইরে প্রশ্ন চলে এলে করণীয় কী হবে?

সাদিয়া তাসনীম : প্রস্তুতির বাইরে প্রশ্ন আসবে, এটা স্বাভাবিক। কিছু প্রশ্ন থাকে একটু চিন্তা করলে পারা যায়। হয়তো টপিকটা সরাসরি পড়িনি। কিন্তু তার আশেপাশের টপিক পড়েছি। আইডিয়া করে প্রশ্নের উত্তর দেওয়া যাবে। এ রকম কিছু প্রশ্ন দাগানো যেতে পারে। অনেক সময় দেখা যায়, দাগানোর পরিমাণ কম হওয়াতে নম্বর কম আসে। আর কিছু প্রশ্ন থাকে, এটা সম্পর্কে কোনও ধারণাই নেই, এ ধরনের প্রশ্ন এড়িয়ে যেতে হবে।

সর্বাধিক পঠিত