০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪
সাক্ষাৎকার : রাফিদ হাসান সাফওয়ান

ভর্তি পরীক্ষায় সেরা হতে হলে করণীয়

শাহ বিলিয়া জুলফিকার
০১ জানুয়ারি ২০২৪, ১৫:১৪
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী রাফিদ হাসান সাফওয়ান। অলংকরণ : কিশোর ডাইজেস্ট

উচ্চমাধ্যমিকের গণ্ডি পার হওয়া অধিকাংশ শিক্ষার্থীরই স্বপ্ন থাকে দেশসেরা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার। এ লক্ষ্যে ইতিমধ্যে আটঘাট বেঁধেও নেমেছে তারা। এ সময় অনেকেই আবার দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভোগে। হতাশাও ভর করে অনেকের। দ্বিধাদ্বন্দ্ব ও হতাশা কাটিয়ে একজন শিক্ষার্থীর এই গুরুত্বপূর্ণ সময়টাতে কী কী করা উচিত, সে সম্পর্কে ২০২০-২১ সেশনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ঘ’ ইউনিট ও গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষায় প্রথম হওয়া এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী রাফিদ হাসান সাফওয়ান নিজের অভিজ্ঞতার আলোকে পরামর্শ দিয়েছেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন শাহ বিলিয়া জুলফিকার

উচ্চমাধ্যমিকের পর করণীয় কী?

রাফিদ হাসান সাফওয়ান : এইচএসসি পরীক্ষার পর থেকে ভর্তি পরীক্ষার খোঁজ রাখতে হবে। কেননা এইচএসসি বা সমমান পরীক্ষার ফল প্রকাশের পর পরই ভর্তি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হয়। যেখানে সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে ঢাকা, চট্টগ্রাম, জাহাঙ্গীরনগর, রাজশাহী এবং বিশেষায়িত কিছু বিশ্ববিদ্যালয় স্বতন্ত্র ভর্তি পরীক্ষার আয়োজন করে থাকে। আর বাকিগুলো গুচ্ছ পদ্ধতিতে মোট ২২টি সাধারণ এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় একটি পরীক্ষার মধ্যে দিয়ে ভর্তি কার্যক্রম পরিচালনা করছে। কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে কৃষি গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা রয়েছে। সায়েন্সদের জন্য বুয়েট স্বতন্ত্র ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে থাকে। তাছাড়া অন্যান্য কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা হয়ে থাকে। সেগুলোর খোঁজ রেখে ওয়েবসাইটের নির্দেশনা অনুযায়ী আবেদন করতে হবে।

প্রস্তুতি কীভাবে শুরু করবে?

রাফিদ হাসান সাফওয়ান : এইচএসসির পর অ্যাডমিশনের প্রস্তুতির জন্য সময়টা আসলে কম। কারও যদি নিজের ওপর আত্মবিশ্বাস থাকে, তাহলে সে নিজে থেকে প্রস্তুতি শুরু করবে। যদি সে মনে করে তার ঘাটতি আছে, নিজে প্রস্তুতি নিতে পারবে না, তাহলে সে কোনও কোচিংয়ের দ্বারস্থ হবে অথবা অভিজ্ঞ কারও পরামর্শ নেবে নিয়মিত। কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়লে তার জন্য ভালো হবে, পাবলিকে নাকি প্রাইভেটে; এই সিদ্ধান্তগুলো নিতে হবে এবং সে আলোকে প্রশ্ন অ্যানালাইসিস করে পড়তে হবে।

এ ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীর লক্ষ্য কেমন হওয়া উচিত?

রাফিদ হাসান সাফওয়ান : সায়েন্স, কমার্স বা আর্টস যে বিভাগের শিক্ষার্থীই হোক, একজন শিক্ষার্থীর প্রধান কাজ হলো নিজের লক্ষ্য স্থির রাখা। বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি প্রস্তুতি নেওয়ার সময় অনেক শিক্ষার্থীকে দেখা যায়, তাদের আসলে কী পড়া উচিত তা নিয়ে তারা কনফিউজড থাকে। আর এজন্য প্রস্তুতি নেওয়াটাও মুশকিল হয়ে পড়ে। এইচএসসির পর একজন শিক্ষার্থীর সামনে অনেক অপশন থাকে। একটি অপশন সিলেক্ট না করে অনেকগুলো অপশন সিলেক্ট করলে সেটি হবে দুই নৌকায় পা দেওয়ার মতো। কেউ যদি অনেকগুলো অপশনে না গিয়ে লক্ষ্য স্থির রাখে যে তাকে এই বিষয় নিয়ে পড়তে হবে, এ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে হবে, তাহলে সে লক্ষ্যটাই তাকে পড়ার টেবিলে মনোযোগ সহকারে পড়াশোনা করতে সাহায্য করবে এবং ডিপ্রেশন থেকে দূরে রাখবে।

নিজেকে কীভাবে গোছাবে?

রাফিদ হাসান সাফওয়ান : অযথা সময় নষ্ট না করে, আড্ডা বা আউটবই না পড়ে একজন শিক্ষার্থী শুধু অ্যাডমিশনের পড়ায় মনোযোগ দেবে। বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তির ক্ষেত্রে পুরোনো প্রশ্নগুলো বারবার দেখবে ও বিশ্লেষণ চালিয়ে যাবে। যদি কোনও সমস্যার সম্মুখীন হয়, তাহলে অভিজ্ঞ কোনও বড় ভাই অথবা কোচিংয়ের কারও শরণাপন্ন হবে। তাছাড়া একজন শিক্ষার্থী নিয়মিত পড়াশোনার পাশাপাশি প্রচুর পরিমাণে এক্সাম দেবে। তাহলেই একজন শিক্ষার্থী তার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারবে।

অভিভাবকদের দায়িত্ব কী?

রাফিদ হাসান সাফওয়ান : যে কোনও সময়ের তুলনায় এই সময়ে অভিভাবকের দায়িত্ব একটু বেশি। এ সময়টায় খুব প্রেশারের মধ্য দিয়ে যেতে হয় একজন ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীর। যে কারণে এই প্রেশারটা সহ্য করার জন্য অভিভাবকের দায়িত্ব একটু বেশি। সন্তান সব সময় যথার্থ কেয়ার পাচ্ছে কিনা, সে বিষয়ে অভিভাবকদের খোঁজখবর রাখা উচিত। তাছাড়া হতাশায় ভুগছে কিনা, তাও জানতে হবে। এ সময়টায় যেহেতু পড়াশোনার চাপ একটু বেশি, তাই তার মানসিক স্বাস্থ্যের প্রতিও খেয়াল রাখতে হবে। সবশেষে মা-বাবার যেটি করা উচিত, তা হলো, সন্তানকে ভালো একটি প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হওয়ার জন্য অনুপ্রেরণা দেবে; কিন্তু তাকে বাধ্য করবে না। বোঝা চাপিয়ে দেবে না। সন্তান যেন তার লক্ষ্য পূরণে ব্যর্থ হলে অভিভাবককে আশ্রয়স্থল হিসেবে ভাবতে পারে।

সর্বাধিক পঠিত