০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪

ভর্তিযুদ্ধে জয়ী হতে পরিশ্রমের বিকল্প নেই

মিনহাজুল ইসলাম শান্ত
১৭ জানুয়ারি ২০২৪, ১১:৩০
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শাকিব হুসাইন। অলঙ্করণ: কিশোর ডাইজেস্ট

এইচএসসি পরীক্ষার পর থেকে শিক্ষার্থীরা স্বপ্নের বিশ্ববিদ্যালয়ে সুযোগ পাওয়ার জন্য বিভিন্নভাবে প্রস্তুতি নিচ্ছে। হাতে খুব বেশি সময় নেই। তাই এই সময়টা গুরুত্বপূর্ণ। এই সময়টায় যে ভালো কিছু করবে, সে-ই স্বপ্নের বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পাবে। সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় ভর্তিযুদ্ধে জয়ী হতে নানা পরামর্শ দিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শাকিব হুসাইন। কিশোর ডাইজেস্টের পক্ষে সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মিনহাজুল ইসলাম শান্ত

সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়বেন, এ স্বপ্ন কবে থেকে দেখা শুরু করেছিলেন?

শাকিব হুসাইন : বিশ্ববিদ্যালয় নামটা প্রথম শুনেছিলাম দশম শ্রেণি থাকা অবস্থায়। অজপাড়াগাঁয়ে ছিলাম তো। দুয়েকজন ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের নামই জানত না। প্রতিমাসে কারেন্ট অ্যাফেয়ার্সের পেছনে পূর্ববর্তী চান্সপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের ছবি দেখতাম। তারপর দ্বাদশ শ্রেণিতে বিভিন্ন ভাই ও বন্ধুদের কাছে আরও ভালো করে বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে জানতে পারি। দশম শ্রেণি থেকে স্বপ্ন দেখেছিলাম যে দেশের যে কোনও বিশ্বিবদ্যালয়ে পড়ব। কিন্তু দ্বাদশ শ্রেণি থেকে স্বপ্ন একটাই হলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

এইচএসসি পরীক্ষার পর আপনি কীভাবে ভর্তি প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করেন, ভর্তি কোচিং কি একজন শিক্ষার্থীর জন্য জরুরি? 

শাকিব হুসাইন : এইচএসসি পরীক্ষার পর আমি ইংরেজি বেসিক আরও ভালো করে পড়া শুরু করি। ইংরেজি প্রথম পত্রের সবগুলো ওয়ার্ড মিনিং, সমার্থক শব্দ, বিপরীত শব্দ মুখস্থ করা শুরু করি। বাংলা আর সাধারণ জ্ঞান একটু আগে থেকেই স্ট্রং ছিলাম। এ জন্য বেশির ভাগ সময় ইংরেজি বেশি করে পড়েছি। আর কোচিং অত বেশি ফ্যাক্ট না। কিন্তু সঠিক গাইডলাইন ও বিভিন্ন প্রতিযোগিতার প্রশ্ন সম্পর্কে ধারণা পেতে হলে কোচিং করা ভালো বলে আমি মনে করি। তাছাড়া কোচিং-এর মাধ্যমেই অনেক জনের সাথে প্রতিযোগিতাও করা যায়।

সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় ভর্তি পরীক্ষায় ভীষণ প্রতিযোগিতা। অনেকে মানসিকভাবে প্রতিযোগিতা ভয় পায়। মানসিকভাবে হতাশ হয়ে যায়। নিজেকে মানসিকভাবে শক্তিশালী করার উপায় কী মনে করেন?

শাকিব হুসাইন : আমি মনে করি ভয় একটি মানসিক ব্যাধি। ভয়ের জন্যই অনেকে নিজেকে গুটিয়ে নেয়। ভর্তি পরীক্ষার সময় যত বেশি ভয় হয়, নিজের ওপর তার থেকে বেশি ভয় হয় প্রতিবেশীর ওপর। চান্স না পেলে অনেকে অনেক কথা বলবে। এজন্য অনেক পরীক্ষার্থী শুরুতেই মনোবল হারিয়ে ফেলে। এই একটা ধারণা মাথা থেকে সরিয়ে ফেলতে হবে। তাছাড়া অ্যাডমিশনের সময় বিভিন্ন আশঙ্কা তৈরি হবেই। এতে ঘাবড়ে না গিয়ে ধৈর্য ধরতে হবে। ‘আমি পারব’ এই মনোবল নিয়ে থাকতে হবে।

ভর্তি পরীক্ষায় ভালো ফলাফলের জন্য বিষয়ভিত্তিক প্রস্তুতি কীভাবে নেওয়া উচিত মনে করেন? শাকিব হুসাইন: কোন বিষয় বা টপিক বেশি গুরুত্ব দিতে হবে? আমি আগেই বলেছি তোমরা যে যেটায় বেশি দুর্বল সেই বিষয়টা বারবার পড়তে থাকো। ভর্তি পরীক্ষায় সাধারণ জ্ঞান থেকে মোট ৩০টা প্রশ্ন আসে। এই সাধারণ জ্ঞানেই তোমাকে অনেক দূর এগিয়ে নেবে। পূর্ববর্তী প্রশ্নগুলো দেখে ওই অনুযায়ী ধারণা নিতে পারো। নির্দিষ্ট করে টপিকগুলো বলা তো যায় না। তাই যেই টপিকগুলোর ওপর বারবার প্রশ্ন আসে ওগুলো বারবার পড়ো। বাংলা, ইংরেজিও পূর্ববর্তী প্রশ্ন প্যাটার্ন দেখে ধারণা নিয়ে পড়ে হবে।

পরীক্ষার আগে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি হিসেবে আপনি কী কী করেছিলেন? 

শাকিব হুসাইন : পরীক্ষার পাঁচ দিন আগে থেকেই আমি বাংলা আর ইংরেজি পড়া বন্ধ করি। ঢাবিতে যেহেতু সাম্প্রতিক বিষয়গুলো বেশি আসে তাই বিভিন্ন সাম্প্রতিক ক্যাপসুল ও কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স পড়তে থাকি। আর ঢাবিতে লিখিত পাস না করলে তো চান্স পাওয়া যায় না; তাই লিখিত বিষয়গুলো বারবার চর্চা করি। এভাবেই পরীক্ষার আগে প্রস্তুতি নিয়েছি।

প্রচুর পড়াশোনা করার পরও সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে যদি কারও চান্স না হয়, তার জন্য আপনার কী পরামর্শ থাকবে? 

শাকিব হুসাইন : সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তিযুদ্ধে জয়ী হতে পরিশ্রমের বিকল্প নেই। পাশাপাশি পরিশ্রম করার সাথে সাথে ভাগ্যও লাগে। অনেক কম পড়েও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পায়। কিন্তু অনেকে আছে যারা প্রচুর পড়াশোনা করেও শেষ মুহূর্তে এসে গন্তব্যে পৌঁছাতে পারে না। তারা তো হতাশায় পড়বে, এটা স্বাভাবিক। কিন্তু একবার হলো না, পরবর্তী সময়ে আরও ভালো করার জন্য দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করতে হবে। অনেকে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েও চাকরির সময় পিছিয়ে যায়। আবার অনেকে আছে যারা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে না পড়েও বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসসহ বিভিন্ন বড় বড় পদে কাজ করে। তাই ভেঙে না পড়ে পরবর্তীর জন্য ধৈর্য ধরতে হবে।

সর্বাধিক পঠিত