০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪

পরীক্ষার আগের দিন মানসিকভাবে শক্ত থাকতে হবে

মিনহাজুল ইসলাম শান্ত
১৮ জানুয়ারি ২০২৪, ১১:৩০
শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী তুর্জয় কবীর। অলঙ্করণ: কিশোর ডাইজেস্ট

২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে আগামী ৯ ফেব্রুয়ারি। সংক্ষিপ্ত সময়টির যথাযথ ব্যবহার ও শেষ সময়ে পরীক্ষার প্রস্তুতির নানা কৌশল নিয়ে কথা বলেছেন শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী তুর্জয় কবীর। কিশোর ডাইজেস্টের পক্ষে সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মিনহাজুল ইসলাম শান্ত

মেডিকেলে পড়বেন, এ স্বপ্ন কবে থেকে দেখা শুরু করেছিলেন?

তুর্জয় কবীর: একদম ছোটবেলা থেকেই আমার ইচ্ছা ছিল মেডিকেলে পড়ার। ক্লাস ওয়ানের একটা ঘটনা বলি। আম্মু-আব্বু দুজনই তখন এনজিওতে চাকরি করত। কোনও এক দুপুরবেলা বৃষ্টিতে ভিজে স্কুটি চালিয়ে আম্মু বাসায় এসেছে লাঞ্চ করতে। কিন্তু আমি বাসার দরজা খুলব না। কারণ, আমাকে খেলনা ডাক্তারি সেট কিনে দেওয়া হয়নি, যেটা আমি কদিন আগে বাজারে দেখেছি। জিদ ধরেছি এখনই কিনে আনতে হবে, না হলে দরজা খুলব না। এরপর আম্মু বাধ্য হয়ে বৃষ্টির মধ্যে বাজারে গিয়ে কিনে আনল। এরপর আমি বাসার দরজা খুলি। বিষয়টা এখন যখন ভাবি, তখন অনেক হাসি পায়। আমার স্মৃতিতে ডাক্তারি পেশার প্রতি আগ্রহ ওই সময় থেকেই ছিল।

এইচএসসি পরীক্ষার পর আপনি কীভাবে ভর্তি প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করেন, ভর্তি কোচিং কি একজন শিক্ষার্থীর জন্য জরুরি?

তুর্জয় কবীর: এইচএসসির সময় যে বিষয়গুলো কম গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে, সেগুলো নতুন করে পড়া শুরু করলাম। প্রথম কয়েক দিনেই Question Bank সমাধান করে ফেলেছিলাম। তাতে প্রশ্নের প্যাটার্ন সম্পর্কে একটা ধারণা হয়ে যায়। এরপর একটা কোচিংয়ে ভর্তি হই রংপুরে। আমি রংপুরে থাকি তখন। কোচিং করে যেটা বুঝেছি, পড়াশোনা সব নিজেই করতে হয়। কোচিং থেকে যে সুবিধা পাওয়া যায়, তা হলো পরীক্ষা দিয়ে নিজেকে যাচাই করার সুযোগ। মডেল টেস্ট যত বেশি দেওয়া যাবে, তত পরীক্ষা দেওয়ার কৌশল উন্নত তবে। এ ছাড়া একটি ইতিবাচক প্রতিযোগিতামূলক মনোভাব তৈরি হয়।

মেডিকেলের ভর্তি পরীক্ষায় ভীষণ প্রতিযোগিতা। অনেকে মানসিকভাবে প্রতিযোগিতা ভয় পায়। মানসিকভাবে হতাশ হয়ে যায়। নিজেকে মানসিকভাবে শক্তিশালী করার উপায় কী মনে করেন?

তুর্জয় কবীর: ভাবনা থাকবে যে আমি সর্বোচ্চ চেষ্টা আর পরিশ্রম করেছি, আমার অবশ্যই ভালো কিছু হবে৷ শুরু থেকেই যদি কেউ সিনসিয়ারলি আর টেকনিক্যালি পড়ে তাহলে ভালো কিছুর জন্য আশা করা যায়। পরীক্ষার আগের দিন মানসিকভাবে শক্ত থাকতে হবে। আগের দিন ভয় পেয়ে অনেকের পরীক্ষা খারাপ হয়ে যায়, যেটা হওয়া উচিত নয়। সেই সাথে সুস্থ থাকা খুবই জরুরি। নিজের মনকে শক্ত রেখে সাহসিকতার সাথে ঠাণ্ডা মাথায় পরীক্ষা দিতে হবে।

মেডিকেলে ভর্তির প্রস্তুতি হিসেবে ইংরেজি বা সাধারণ জ্ঞান অনেকে কম গুরুত্ব দেয়। এ দুটোতে ভালো করার উপায় কী?

তুর্জয় কবীর: সাধারণ জ্ঞানের জন্য Current affairs আর পত্রিকা পড়া খুবই প্রয়োজন। নিজেকে সম্প্রতি সকল ঘটনা নিয়ে Up to date থাকতে হবে। বিষয়টা তুলনামূলক কঠিন মনে হয় সবার ক্ষেত্রেই, কিন্তু পড়তে থাকতে হবে। ইংরেজিতে বিভিন্ন সময় আসা Exceptional Grammer-ভিত্তিক প্রশ্নগুলো আয়ত্ত করা জরুরি। সেক্ষেত্রে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় এবং বিসিএসের প্রশ্নগুলো দেখতে হবে।

পরীক্ষার আগে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি হিসেবে আপনি কী কী করেছিলেন?

তুর্জয় কবীর: শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি হিসেবে বিভিন্ন মুখস্থনির্ভর তথ্যগুলো চোখ বুলিয়েছি। নতুন করে মুখস্থ করা বা মনে রাখার চেষ্টা বাদ দিয়ে শুধু বইয়ের পৃষ্ঠা উল্টিয়েছি।

প্রচুর পড়াশোনা করার পরও মেডিকেলে যদি কারও চান্স না হয়, তার জন্য আপনার কী পরামর্শ থাকবে?

তুর্জয় কবীর: কারও যদি কোনোভাবে চান্স না হয়ে থাকে এবং তার যদি প্রচণ্ড দৃঢ় ও প্রগাঢ় ইচ্ছা থাকে সে ডাক্তারই হবে, তাহলে সে পরের বছর চেষ্টা করতে পারে। তাও যদি না হয় তাহলে ভাবতে হবে যে স্রষ্টা আমার জন্য অন্য কিছু লিখে রেখেছেন।

৫ বছর ধরে মেডিকেলে থেকে আমি অনেককেই দেখেছি যে, চান্স পাওয়ার পরে মেডিকেলের পড়াশোনার বিশালতায় আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। অনেকে মা-বাবার চাপে পড়ে মেডিকেলে পড়তে আসে। এজন্য নিজের আগ্রহের জায়গাটা বের করা জরুরি এবং সেদিকে এগিয়ে যাওয়াটা বুদ্ধিমানের কাজ।

পরিশেষে বলতে চাই, অধ্যবসায়, পরিশ্রম এবং দৃঢ় ইচ্ছা ধারণ করলে সাফল্য আসবেই। সবার জন্য শুভ কামনা।

সর্বাধিক পঠিত