০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪

ইসলামে জ্ঞান ও জ্ঞানীর মর্যাদা

জোবাইদুল ইসলাম
২৩ ডিসেম্বর ২০২৩, ০০:৪৯
জ্ঞান এমন একটি বিষয় যা মানুষকে উচ্চাসনে আসীন করতে পারে। প্রতীকী ছবি

ইলম আরবি শব্দ। এর শাব্দিক অর্থ হলো জানা, বোঝা, হৃদয়ঙ্গম করা, জ্ঞান ইত্যাদি। পরিভাষায় বিখ্যাত আরবি অভিধান ‘আল মুজামুল ওয়াসিত’ প্রণেতার মতে, ‘ইলম বলা হয় কোনও কিছু সম্পর্কে যাবতীয় তত্ত্ব ও তথ্যানুসারে সম্যক জ্ঞান অর্জন করা।’

মহান আল্লাহ তায়ালা রাসুল (সা.) এর কাছে সর্বপ্রথম ওহি প্রেরণ করে বলেন, ‘ইকরা’ অর্থাৎ পড়। এই পড়ার দ্বারাই মানুষের জ্ঞান অর্জিত হয়। জ্ঞান এমন একটি বিষয় যা মানুষকে উচ্চাসনে আসীন করতে পারে। যার দ্বারা মানুষের নামডাক ছড়িয়ে পড়ে পুরো পৃথিবীজুড়ে। আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেছেন, ‘বল, যারা জানে এবং যারা জানে না তারা কি সমান?’ (সুরা যুমার : ৯) আল্লাহ তায়ালা আরও বলেছেন, ‘আর যাদেরকে জ্ঞান দান করা হয়েছে তাদের জন্য রয়েছে উচ্চ মর্যাদা।’ (সুরা মুজাদালাহ : ১১) রব্বে কারিম আরও ইরশাদ করেছেন, ‘তোমাকে তারা রুহ সম্পর্কে প্রশ্ন করে, তুমি বল রুহ আমার রবের আদেশ ঘটিত; এ বিষয়ে তোমাদেরকে সামান্য জ্ঞানই দেওয়া হয়েছে।’ (সুরা ইসরা : ৮৫)

জ্ঞান অর্জনের প্রতি গুরুত্বারোপ করে রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘প্রত্যেক নর-নারীর উপর দ্বীনি ইলম শিক্ষা করা ফরজ।’ রাসুল (সা.) আরও বলেছেন, ‘আমি হলাম জ্ঞানের শহর।’ জ্ঞানীর মর্যাদা সম্পর্কে রাসুল করিম (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘আবেদের ওপর আলেমের মর্যাদা হলো সমস্ত তারার ওপর চাঁদের মর্যাদার মতো।’

জ্ঞান অর্জন করার জন্য করতে হয় অনেক কষ্ট, সাধনা, পরিশ্রম। এই কষ্ট-সাধনা করে যারা জ্ঞান অর্জন করে তারাই পুরো পৃথিবীজুড়ে পরিচিতি পায়, পায় জ্ঞানের স্বীকৃতি। জ্ঞান অর্জন করার নির্দিষ্ট কোনও বয়স নেই। এজন্য বলা হয়, ‘দোলনা থেকে কবর পর্যন্ত জ্ঞান অর্জন করো।’ রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘দ্বীনি জ্ঞান অন্বেষণের জন্য জন্য যে পথ চলতে থাকে তার জন্য আল্লাহ তায়ালা বেহেশতের পথ সহজ করে দেন।’

জ্ঞান শুধু বইয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলে তা প্রকৃত জ্ঞান নয়। এজন্য বলা হয় জ্ঞান হলো ‘যা বক্ষে থাকে, যা ছত্রে থাকে তা নয়।’ রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘আল্লাহ তায়ালা যার কল্যাণ চান করেন, তাকে দ্বীনের সঠিক জ্ঞান দান করেন।’ (বুখারী ও মুসলিম)

জ্ঞান অর্জনের ফজিলত সম্পর্কে রাসুল (সা.) থেকে অনেক হাদিস বর্ণিত হয়েছে। যেমন হজরত ইবনু আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, একজন ফক্বীহ (আলিমে দ্বীন) শয়তানের কাছে হাজার আবিদ (ইবাদাতকারী) হতেও বেশি ভীতিকর।’ (তিরমিযী ও ইবনু মাজাহ)

অতএব জ্ঞান অর্জনের গুরুত্ব ও ফজিলত অপরিসীম। প্রত্যেক মুসলমানের উচিত দ্বীনি জ্ঞান অর্জনের পাশাপাশি দুনিয়াবি জ্ঞানও অর্জন করা এবং জ্ঞানের যথাযথ প্রয়োগ ও ব্যবহার করা এবং আল্লাহর শিখিয়ে দেওয়া এই দোয়া বেশি বেশি পাঠ করা ‘রব্বি যিদনী ইলমা’ অর্থাৎ হে প্রভু! আমার জ্ঞান বৃদ্ধি করে দিন। (সুরা ত্বোহা : ১১৪)

লেখক : শিক্ষার্থী, আরবি বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

সর্বাধিক পঠিত