চোখ আমাদের সবচেয়ে মূল্যবান অঙ্গ। কারণ, চোখ দিয়েই আমরা পৃথিবীর সৌন্দর্য দেখতে পাই। খুব স্বাভাবিকভাবেই এই চোখের প্রতি আমাদের সবচেয়ে বেশি যত্নশীল হওয়ার কথা। কিন্তু তা হচ্ছে কি? বর্তমানে দেখবেন, অনেক ছোট ছোট ছেলেমেয়ের চোখে চশমা পরতে হচ্ছে। এর কারণ হলো অপুষ্টি এবং যত্নহীনতা। সুস্থ চোখ ও প্রখর দৃষ্টিশক্তি বজায় রাখার জন্য অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট, ভিটামিন ও খনিজ পদার্থ যথেষ্ট পরিমাণে আছে, এমন খাবারগুলো খাদ্যতালিকায় অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। চোখের জন্য সেরা কিছু খাবারের কথা এখন জেনে নেওয়া যাক। এগুলোকে আপনার ডায়েটে রাখলে তা সারা জীবন দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখতে সাহায্য করবে।
১. ব্রকলি: আমেরিকান অপটোমেট্রিক অ্যাসোসিয়েশনের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, ব্রকলিতে পাওয়া একটি যৌগ ইন্ডোল থ্রি কারবিনল আপনার রেটিনা থেকে চাপ অপসারণ করতে সহায়তা করে। এ ছাড়া বয়সজনিত অন্ধত্ব হ্রাস করে এই সবজি। ব্রকলিতে লুটেইন ও জেকানথিন রয়েছে, যা আপনার চোখের জন্য প্রতিরক্ষামূলক।
২. তেলতেলে মাছ: চোখ সুস্থ রাখা মানে চোখকে যথেষ্ট পরিমাণে হাইড্রেটেড রাখা। সুস্থ চোখের জন্য সেরা খাবারগুলোর মধ্যে একটি হলো তেলতেলে, বিশেষ করে সামুদ্রিক মাছ। এতে ওমেগা–৩ ফ্যাটি অ্যাসিড রয়েছে, যা চোখের শুষ্কতা দূর করে।
৩. গাজর: আপনি সম্ভবত এটি আগেও শুনেছেন যে গাজর চোখের স্বাস্থ্যের জন্য সেরা খাবারগুলোর মধ্যে একটি। এর মধ্যে থাকা অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট শরীরে ভিটামিন এ তৈরি করার জন্য সহায়তা করে। এটি রাতে স্পষ্ট দেখতে এবং মায়োপিয়া থেকে চোখকে রক্ষা পেতে সহায়তা করে। এ ছাড়া গাজরে থাকা লুটেইন আর অন্য সব অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট আপনাকে বিভিন্ন চক্ষুরোগ প্রতিরোধে সহায়তা করতে পারে।
৪. সূর্যমুখীর বীজ: সূর্যমুখীর বীজে প্রচুর ভিটামিন ই ও অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট রয়েছে, যা অক্সিডেটিভ স্ট্রেস থেকে আমাদের চোখকে রক্ষা করে। এ ছাড়া এগুলো সূর্যের ক্ষতিকর ইউভি রশ্মির বিরুদ্ধে লড়াই করতে সহায়তা করে চোখকে।
৫. সি ফুড: সামুদ্রিক মাছ ও অন্যান্য সি ফুড সর্বদা ভালো প্রোটিনের উৎস। এ ক্ষেত্রে সেলেনিয়াম ও জিংকের উচ্চ শতাংশের কারণে সি ফুড খুবই পুষ্টিকর। এটি শরীরের কার্যকারিতা উন্নত করে। এ দুটি খনিজ পদার্থ বার্ধক্যের প্রভাবকে বিলম্বিত করে; আর রেটিনা দিয়ে গঠিত চোখের ভেতরের ম্যাকুলার অঞ্চলকে রক্ষা করে।
৬. কমলা: চোখের স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে উত্তম সাইট্রাস ফলগুলোর মধ্যে একটি হলো কমলালেবু। এটি ভিটামিন সির উৎস, যা চোখ ছানিতে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা কমাতে সহায়তা করে। এ ছাড়া এর বিটা ক্যারোটিন ক্যানসার প্রতিরোধ করতে এবং রেটিনার দ্রুত অবক্ষয় রোধ করতে সহায়তা করে। এর আরও সুবিধা হলো, এটি চোখের চাপ নিয়ন্ত্রণ করে ও কমায়।
৭. ডিম: একটি স্বাস্থ্যকর এবং সুষম খাদ্য। এটি ভিটামিন এ, থায়ামিন ও আয়রনের একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস। এটি দৃষ্টিশক্তি তীক্ষ্ণ করতে সাহায্য করে। এতে লুটেইনও রয়েছে। এটি আসলে একটি রঞ্জক, যা রেটিনাকে ভালো রাখে, সূর্যের আলো থেকে রক্ষা করে। এ ছাড়া কমলার ক্যান্থাক্সানথিন বয়স্কদের চোখে ছানির বিকাশকে বাধা দেয়।
৮. বাদাম: স্বাস্থ্য রক্ষা করার জন্য বাদামকে অপরিহার্য খাবারগুলোর মধ্যে একটি হিসেবে ধরা হয়। বাদামে ওমেগা–৩, ভিটামিন বি ও প্রোটিন দিয়ে তৈরি। অন্যদিকে বাদামে সেলেনিয়াম ও জিংক রয়েছে। এ উপাদানগুলো চোখ সুস্থ রাখতে এবং চোখের পেশিগুলোকে শক্তিশালী করতে সহায়তা দেয়। একইভাবে এর অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট রেটিনার অবক্ষয়ের প্রক্রিয়াকে বিলম্বিত করে।
৯. সবুজ শাকসবজি: পালংশাক এবং অন্য শাকসবজিতে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট রয়েছে। যেমন লুটেইন ও জেক্সানথিন, যা চোখের ভেতরের ম্যাকুলার অবক্ষয় ও ছানি পড়ার ঝুঁকি কমায়।
তথ্যসূত্র: হেলথলাইন, ছবি: পেকজেলস ডট কম