আমরা প্রায় সবাই জীবনের কোনো না কোনো সময়ে অসম্মান কিংবা অপমানের মুখোমুখি হই। শুনতে হয় নানা নেতিবাচক কথা। এতে অনেকে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন। নেতিবাচক এসব কথা অনেক সময় কাছের মানুষজনের কাছ থেকেই বেশি শুনতে হয়। এমন পরিস্থিতিতে কী করবেন?
প্রথম কথা হলো, অতিভাবনা ঝেড়ে ফেলুন। নিয়ন্ত্রণ করুন নিজের আবেগকে। আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে অস্বস্তিকর পরিবেশ আপনি সহজেই মোকাবিলা করতে পারবেন। তবে হ্যাঁ, এ ধরনের পরিস্থিতি মোকাবিলার সময় আপনাকে অবশ্যই শান্ত, স্থির ও আত্মবিশ্বাসী থাকতে হবে। অপমানজনক কথা মোকাবিলা করার কিছু উপায় চলুন জেনে নেওয়া যাক।
শান্ত থাকুন: কেউ আপনার প্রতি নেতিবাচক মন্তব্য করছেন। আপনি রেগে যাবেন না। আবার আপনি যে তাঁর কথায় আঘাত পেয়েছেন কিংবা হতাশ হয়েছেন, সেটাও তাঁকে বুঝতে দেবেন না। তাহলে ব্যাপারটা তাঁর জন্য আরও মজার হয়ে উঠবে। আরও বেশি নেতিবাচক মন্তব্য ছুড়তে থাকবে। তাই আপনাকে শান্ত ও সংযত থাকতে হবে। প্রতিক্রিয়া জানানোর আগে কিছুক্ষণ সময় নিন। বুক ভরে শ্বাস নিন। এমনটা করলে অস্বস্তিকর পরিবেশ তৈরি হবে না।
পুনর্বিবেচনা করার সুযোগ দিন: কেউ আপনার প্রতি নেতিবাচক মন্তব্য ছুড়ে দিলে পাল্টা প্রতিক্রিয়া দেখাবেন না; বরং মন্তব্যকারীকে তাঁর কথার পুনরাবৃত্তি করতে বলুন। এমনটা করলে মন্তব্যকারী কিছুটা ভড়কে যাবেন এবং নিজের ভেতরে একধরনের অস্বস্তি বোধ করবেন। এতে তাঁর বলা কথাটা পুনর্বিবেচনা করতে বাধ্য হবেন। সেই সঙ্গে অসম্মানজনক আচরণ করা থেকে বিরত হবেন।
নিজের ওপর বিশ্বাস রাখুন: মনে রাখবেন, কোনো ব্যক্তি আপনাকে অপমান করছেন মানে তাঁর নিরাপত্তাহীনতাই প্রকাশ করছেন। মনে রাখবেন, লোকে যা বলবে, আপনি তা নন। তাই নিজের ওপর বিশ্বাস রাখুন। মনোযোগ দিন নিজের শক্তির ওপর। মিশুন সেসব মানুষের সঙ্গে, যাঁরা আপনাকে সমর্থন করেন এবং যথাযথ মূল্যায়ন করেন। অন্যের কটূক্তি হাওয়ায় মিলিয়ে যেতে পারে আপনার মানসিকতা যদি হয় শক্ত।
যথাযথভাবে জবাব দিন: অপমানজনক কোনো কথার জবাব যদি দিতেই চান, তাহলে মাথা ঠান্ডা রাখুন। মোটেও রেগে যাবেন না। জবাব দিন শান্ত থেকে, আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে। দৃঢ়ভাবে যদি তাঁকে বলতে পারেন, ‘আপনি যা বললেন, সেটা কিন্তু আমার ভালো লাগেনি।’ তাহলে দেখবেন আপনাদের পরবর্তী কথাবার্তায় শ্রদ্ধা থাকবে। পরিস্থিতি আরও ঘোলাটে হবে না।
উদ্দেশ্য জানতে চান: কেউ আপনাকে বারবার অপমান করলে দ্বিধা না করে সরাসরি তাঁকে জিজ্ঞেস করুন। বলুন, ‘আপনি কি আমাকে অপমান করার চেষ্টা করছেন?’ এতে দেখবেন, অপর পক্ষ তার বলা কথা নিয়ে ভাবতে বাধ্য হবে কিংবা নিজের বলা কথা ফিরিয়ে নেবে। পাশাপাশি আপনাদের কথোপকথনের নিয়ন্ত্রণ চলে আসবে আপনার হাতে।
সম্পর্কটা কেমন ভাবুন: আপনাকে অপমান করা মানুষটির সঙ্গে আপনার সম্পর্ক কেমন, সেটা ভাবুন। চিন্তা করুন, সেই সম্পর্ক আপনার কাছে কতটা গুরুত্বপূর্ণ। অনেক সময় এমন হয়, অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে কিংবা এক-আধবার অপ্রীতিকর কোনো ঘটনা ঘটে যেতেই পারে। কিন্তু সেটা যদি নিয়মিতই ঘটে, তাহলে তাঁর সঙ্গে দূরত্ব বজায় রাখা কিংবা যোগাযোগ কমিয়ে দেওয়াই উত্তম সিদ্ধান্ত হবে। নিজে ভালো থাকার ব্যাপারটা প্রথমে খেয়াল রাখতে হবে। এর জন্য তাঁদের সঙ্গেই মিশুন, যাঁরা আপনার সঙ্গে সম্মানজনক আচরণ করেন।
দেয়াল তুলে দিন: কোনো ব্যক্তি যদি বারবার অপমান করতে থাকে, তাহলে তাঁকে সাফ সাফ বলে দিন, ‘আপনার আচার–আচরণ আমার ভালো লাগছে না।’ কিংবা বলতে পারেন, ‘শোনেন ভাই, আপনার এ ধরনের কথাবার্তা আমার ভালো লাগছে না।’ ওই ব্যক্তিকে জানাতে পারেন যে আপনি সম্মানজনক আচরণ আশা করেন। আর এসব বলুন আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে।
তথ্যসূত্র: রিডার্স ডাইজেস্ট