পৃথিবীর অন্যতম বৃহত্তম জাতিগোষ্ঠী হচ্ছে বাঙালি। এ জাতির সংস্কৃতি অত্যন্ত সমৃদ্ধ ও শক্তিশালী। বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতি পৃথিবীজুড়েই সুপ্রসিদ্ধ। তবে নতুন প্রজন্মের অনেক ছেলে-মেয়েরা বাঙালি সংস্কৃতিকে যেন খানিকটা অবজ্ঞা করে, সেকেলে ও অনাধুনিক মনে করে। যার ফলে অনেক ছেলে-মেয়েদের মধ্যে দেশপ্রেম, জাতীয়তাবোধের ঘাটতি তৈরি হয়। একজন শিশুকে সত্যিকারভাবে বেড়ে উঠতে হলে, আদর্শ নাগরিক হিসেবে গড়ে উঠতে হলে নিজ সংস্কৃতি জানতে হবে। নিজ সংস্কৃতিকে শ্রদ্ধা করার মানসিকতা ছোটবেলা থেকেই তৈরি করতে হবে। এ কাজটা পরিবারের বাবা-মা সহজেই করতে পারেন।
২০০৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের বেথ ম্যাশিনট নামের শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন গবেষক ‘দ্য ইনফ্লুয়েন্স অব কালচার অন আর্লি চাইল্ড ডেভেলপমেন্ট’ শীর্ষক এক গবেষণাপত্র প্রকাশ করেন। সেখানে তিনি বিভিন্ন গবেষণার সূত্র উল্লেখ করে বলেন, শিশুর ভাষা শেখা, সামাজিক দক্ষতা, ধারণার জগৎ তৈরিসহ আত্মোপলব্ধির জন্য সংস্কৃতিচর্চার বিকল্প নেই। তাই সন্তানকে দেশীয় সংস্কৃতি শেখাতে এই বিষয়গুলো মাথায় রাখতে পারেন—
বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতিকে শ্রদ্ধা করতে হবে: আমাদের মাতৃভাষা বাংলা। শিক্ষার মাধ্যমও এটি। তবে ইংরেজি মাধ্যম হোক, কিংবা আরবি, সন্তানকে বাংলা ভাষা আগে শেখাতে হবে। পাশাপাশি নিজ দেশের সংস্কৃতিকেও শ্রদ্ধা করতে শেখাতে হবে।
স্কুল নির্বাচন সঠিক হতে হবে: ইংরেজি মাধ্যমের স্কুল মানেই বিজাতীয় সংস্কৃতি নয়, এটা মাথায় রাখতে হবে। কেবল ভালো ফলাফল দেখে নয় বরং স্কুলের সার্বিক বৈশিষ্ট্য দেখে স্কুল নির্বাচন করুন।
দেশীয় সংস্কৃতিকে অবজ্ঞা নয়: সন্তানের সামনে দেশীয় উৎসব, রীতি আর সংস্কৃতিকে কখনোই অবজ্ঞা করবেন না। এতে তার মধ্যে আচরণের ত্রুটি দেখা দিতে পারে। দেশের বিভিন্ন সাংস্কৃতিক উৎসবে সন্তানকে নিয়ে অংশগ্রহণ করুন। দেশের সমৃদ্ধ ঐতিহ্যের কথা সন্তানদের জানান।
স্কুলের অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়া: পড়ালেখার বাইরেও আপনার সন্তানের স্কুলে নানা ধরনের অনুষ্ঠান হয়ে থাকে। আপনার ব্যস্ততার অজুহাতে সেগুলো এড়িয়ে যাবেন না।
কেবল পড়ার বই নয়: গুটি কয়েক পড়ার বইয়ের মধ্যে আপনার শিশুর জীবনটাকে আটকে ফেলবেন না। এর বাইরেও একটা বিশাল জগৎ আছে। অন্য বইয়ের জগৎ, সিনেমা-নাটক-গানের জগৎ। শিশুকে আগামী শতকের জন্য উপযুক্ত করতে হলে এগুলোর সঙ্গে তার পরিচয় ঘটান।
পারিবারিক মূল্যবোধ: পরিবারের মধ্যে বিজাতীয় সংস্কৃতি এড়িয়ে চলুন। চিরায়ত বাঙালি পারিবারিক মূল্যবোধের চর্চা করুন।
দায়িত্বশীল অভিভাবক হোন: প্রয়োজনে স্কুলের সঙ্গে কথা বলুন এবং স্কুলকে উৎসাহিত করুন দেশীয় সংস্কৃতিকে লালন করার জন্য।
সন্তানকে শ্রেণিবিভাজন শেখাবেন না: ‘ও বাংলা মিডিয়াম, ক্ষেত’, ‘ওরা গরিব’ ইত্যাদি বলে সাম্প্রদায়িকতা আর শ্রেণিবিভাজন বিষ সন্তানের অন্তরে প্রবেশ করাবেন না।
কূপমণ্ডূকতা পরিহার করুন: কেবল ভালো ফল আর বিদেশে পড়তে পারাটাই তার জীবনের একমাত্র লক্ষ্য হতে পারে না। আপনার স্বপ্নগুলোকে বড় করুন, সন্তানকে বড় বড় স্বপ্ন দেখতে শেখান।