পৃথিবীর সদা পরিবর্তনশীল প্রকৃতির প্রমাণ পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। তৈরি হতে চলেছে পৃথিবীর ষষ্ঠ মহাসাগর। আফ্রিকা মহাদেশে এমনই সম্ভাবনার খোঁজ মিলেছে বৈজ্ঞানিক তদন্তের মাধ্যমে। একটি নতুন মহাসাগরের জন্ম, লক্ষ লক্ষ বছরের সাধনার সমান। এই সম্ভাবনা পৃথিবীর গতিশীল বিবর্তনের আভাস দেয়। যে কারণে এই ষষ্ঠ মহাসাগর গঠনের হতে পারে, সেই কারণও আবিষ্কার করেছেন বিজ্ঞানীরা।
বলা বাহুল্য, আফ্রিকায় এই ষষ্ঠ মহাসাগর গঠনের ধারণাটি পৃথিবীর ভূতত্ত্বকে আরও গভীরে অনুসন্ধান করাই আগ্রহ বাড়িয়েছে। গ্রহ পৃথিবী পাঁচটি মহাসাগর মিলিয়ে ৭১ শতাংশ জলে আচ্ছাদিত। প্রশান্ত মহাসাগর, আটলান্টিক, ভারতীয়, দক্ষিণ এবং আর্কটিক মহাসাগর।
হিন্দুস্তান টাইমসের প্রতিবেদন বলছে, ভূতাত্ত্বিকদের মতে, এবার আফ্রিকান মহাদেশ তার সমৃদ্ধ এবং বৈচিত্র্যময় ল্যান্ডস্কেপসহ একটি বিরল ভূতাত্ত্বিক ঘটনার কারণে নতুন মহাসাগর গঠনের দিকে এগিয়ে চলেছে। আফার ট্রায়াঙ্গলে বিকাশমান এই প্রক্রিয়া।
প্রতিবেদন অনুসারে, আফার ট্রায়াঙ্গেল হলো একটি ভূতাত্ত্বিক নিম্নচাপ, যেখানে তিনটি টেকটোনিক প্লেট–নুবিয়ান, সোমালি এবং আরবীয় প্লেট–একসঙ্গে মিলিত হয়। এটি আফার অঞ্চল থেকে পূর্ব আফ্রিকা পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। টেকটোনিক প্লেটগুলোর আলাদা হওয়ার ফলে এখানে ঘটে যাওয়া রিফটিং প্রক্রিয়াটি লক্ষ লক্ষ বছর ধরে ঘটছে।
২০০৫ সালে একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা এই ধীর প্রক্রিয়াটিকে বিশ্বের নজরে এনেছিল। ইথিওপিয়ান মরুভূমিতে একটি ৩৫ মাইল দীর্ঘ ফাটল খুলে গিয়েছে, যা আফ্রিকা মহাদেশকে বিভক্ত করে দিতে পারে। সংকেত বলেছে, টেকটোনিক শক্তির উপরিভাগের অভিব্যক্তি, আরও গভীরে কাজ করছে, সোমালি প্লেট নুবিয়ান প্লেট থেকে দূরে সরে যাচ্ছে, যার ফলে পৃথিবীর ভূত্বক প্রসারিত এবং পাতলা হয়ে যাচ্ছে। এভাবেই ২০০৫ সালে ইথিওপিয়ান মরুভূমিতে যে ফাটল দেখা গিয়েছিল, তাই আফ্রিকা মহাদেশ বিভক্ত হওয়ার একটি চিহ্ন ছিল।
ভূতাত্ত্বিকরা অনুমান করেছেন যে পাঁচ থেকে ১০ মিলিয়ন বছরের মধ্যে, টেকটোনিক শক্তি আফ্রিকা মহাদেশকে দুটি ভাগে বিভক্ত করবে। যার ফলে একটি নতুন সমুদ্র অববাহিকা তৈরি করবে। জলের এই নতুন আধারের ফলে আফার অঞ্চলে লোহিত সাগর এবং এডেন উপসাগর এবং পূর্ব আফ্রিকান রিফ্ট উপত্যকায় বন্যা দেখা দেবে। ফলস্বরূপ, পূর্ব আফ্রিকার এই অংশটি নিজস্ব আলাদা মহাদেশ হয়ে যাবে। মনে রাখবেন, একটি নতুন মহাসাগরের গঠন অত্যন্ত জটিল এবং দীর্ঘ প্রক্রিয়া। যার মধ্যে মহাদেশীয় ভাঙ্গন থেকে মধ্য-সাগরীয় বৃদ্ধি পর্যন্ত ভাঙনের বিভিন্ন পর্যায় রয়েছে।