হালকা-পাতলা শরীর। তেমন দীর্ঘদেহীও নন, উচ্চতা ৫ ফুট ৮ ইঞ্চি। দেখে মনেই হবে না তিনি জাতীয় দলের ক্রিকেটার, তা-ও আবার পেসার! তাসকিন আহমেদ, শরীফুল ইসলাম, ইবাদত হোসেনের মতো দীর্ঘদেহী পেসারদের ভিড়ে তাঁকে খুঁজে পাওয়াই কঠিন। দীর্ঘদেহী পেসারদের সারিতে তিনি যেন এক ব্যতিক্রম। বলা হচ্ছে তানজিম হাসান সাকিবের কথা। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সর্বশেষ ম্যাচে ক্যারিয়ার-সেরা বোলিং করেছেন। ১৮ রানে ৩ উইকেট নিয়ে বাংলাদেশকে ওই ম্যাচে ভালো কিছুর সম্ভাবনাটা প্রথম দেখিয়েছিলেন তিনিই।
গত বছরের সেপ্টেম্বরে এশিয়া কাপে ভারতের বিপক্ষে আন্তর্জাতিক অভিষেক। টি-টোয়েন্টি খেলছেন ডিসেম্বর থেকে। ছোট্ট ক্যারিয়ার, কিন্তু এর মধ্যেই দুটি বিশ্বকাপ খেলে ফেলছেন। একটি ভারতে অনুষ্ঠিত গত ওয়ানডে বিশ্বকাপ, এরপর এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। দীর্ঘদেহী নন, ধারাবাহিকভাবে ঘণ্টায় ১৪০ কিলোমিটারের আশপাশের গতিতে বল করেন না। বিশ্বকাপ দলে জায়গা হয়নি দক্ষতায়ও তাঁর চেয়ে এগিয়ে থাকা কয়েকজন পেসারের। তাহলে তানজিম কীভাবে এত দ্রুত প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ পেস আক্রমণে জায়গা করে নিলেন? উত্তর একটাই—আত্মবিশ্বাস। নিজেকে কীভাবে গড়ে তুলেছেন, সে প্রসঙ্গে একবার তিনি বলেছিলেন, ‘ক্রিকেট অনেকটাই স্নায়ুর খেলা। যত আত্মবিশ্বাসী থাকবেন, তত প্রতিপক্ষকে দমিয়ে রাখতে পারবেন। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আসার আগে আমার এটাই চিন্তা ছিল। আমি বয়সভিত্তিক ক্রিকেটে এভাবেই খেলেছি, ঘরোয়া ক্রিকেটেও এভাবে খেলেই নিজেকে তৈরি করেছি।’
তানজিমের এই মানসিকতা চোখে পড়েছে টিম ম্যানেজমেন্টেরও। বিশ্বকাপের জন্য দেশ ছাড়ার আগে ঘরের মাঠে জিম্বাবুয়ে সিরিজে ২ ম্যাচ খেলে মাত্র ১ উইকেট নিয়েছিলেন তানজিম। ‘প্রতিদ্বন্দ্বী’ মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন ৪ ম্যাচে নেন সিরিজ সর্বোচ্চ ৮ উইকেট। তবু আক্রমণাত্মক মানসিকতার কারণেই বড় মঞ্চের জন্য সাইফউদ্দিনের চেয়ে তানজিমকে যোগ্য ভেবেছেন নির্বাচকেরা। তিনি সেই আস্থার প্রতিদানও দিয়েছেন। বিশ্বকাপে দুই ম্যাচ খেলে এর মধ্যেই নিয়েছেন ৪ উইকেট।
তাঁর দুর্দান্ত পারফরম্যান্স বাংলাদেশ দলে পেসারদের মধ্যে প্রতিযোগিতা বাড়িয়ে দিয়েছে। চোটের কারণে দারুণ ছন্দে থাকা শরীফুল ইসলাম বিশ্বকাপের প্রথম দুটি ম্যাচ খেলতে পারেননি। শেষ দুই ম্যাচে তাঁর ফেরার কথা। তবে তাসকিন ও মোস্তাফিজুর রহমানের সঙ্গে দারুণ ফর্মে থাকা তানজিমও মধুর বিড়ম্বনায়ই ফেলবেন টিম ম্যানেজমেন্টকে। কাকে রেখে কাকে বাদ দেবেন তাঁরা!