১৮ অক্টোবর ২০২৪

পিতা-পুত্র জুটিতে দাবায় ইতিহাস গড়েছিলেন গ্র্যান্ডমাস্টার জিয়া

কিশোর ডাইজেস্ট ডেস্ক
০৬ জুলাই ২০২৪, ০৯:০২
বিশ্ব দাবা অলিম্পিয়াডে জিয়াউর রহমান পুত্র তাহসিন তাজওয়ার জিয়ার সঙ্গে জুটি বেঁধেছিলেন । ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশের দাবা জগতের অন্যতম বড় তারকা ছিলেন সদ্য প্রয়াত গ্র্যান্ডমাস্টার জিয়াউর রহমান। ৫০ বছর বয়সে দাবা খেলতে খেলতে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়া জিয়া দীর্ঘ ক্যারিয়ারে অনন্য ইতিহাস গড়েছিলেন ২০২২ সালে। ওই বছর জুলাইয়ে ভারতে অনুষ্ঠিত ৪৪তম দাবা অলিম্পিয়াডে জিয়াউর রহমান জুটি বেঁধেছিলেন পুত্র তাহসিন তাজওয়ার জিয়ার সঙ্গে। দাবা অলিম্পিয়াডে পিতা-পুত্রের এমন জুটির ইতিহাস নেই এশিয়াতে। বিশ্বদাবায়ও বিরল।

জিয়ার বয়স তখন ৪৮ বছর। সেটি ছিল তার ১৫তম দাবা অলিম্পিয়াড। তখন মাত্র ১৬ বছর বয়সী ছেলে জুটি বেঁধেছিলেন তার সঙ্গে। ঘরোয়া প্রতিযোগিতায় অনেকবার মুখোমুখি হয়েছেন পিতা-পুত্র। ছেলের কাছে হেরেছেন, ড্র করেছেন। ছেলের কাছে হারের পর হাসিমুখ থাকতো স্বল্পভাষী জিয়ার। দাবা পরিবার থেকে উঠে আসা জিয়ার সবশেষ স্বপ্ন ছিল ওই ছেলেকে গ্র্যান্ডমাস্টার হিসেবে দেখবেন।

বিশ্ব দাবা অলিম্পিয়াডে পিতা-পুত্র দেশের প্রতিনিধিত্ব করার ঘটনা বাংলাদেশে প্রথম তো বটেই, বিশ্ব দাবাও খুব একটা নেই। ‘উজবেকিস্তানে বাবা ছেলে গ্র্যান্ডমাস্টার রয়েছে। তবে তারা সম্ভবত দাবা অলিম্পিয়াডে অংশ নেয়নি একসঙ্গে।’ এ তথ্য তখন জানিয়েছিলেন জিয়াউর রহমান। বিশ্ব দাবা অঙ্গনে যথেষ্ট বিচরণ আন্তর্জাতিক বিচারক হারুনুর রশিদের। তিনি বলেছিলেন,  বাবা-পুত্রের অলিম্পিয়াডে অংশগ্রহণ আসলে সুনির্দিষ্টভাবে বলা সম্ভব নয়। সাম্প্রতিক বা নিকট অতীতে বাবা-ছেলে অলিম্পিয়াডে খেলার ঘটনা দেখিনি। তবে দুই ভাই-বোন, এ রকম রয়েছে অনেক।’

জিয়াউর রহমান ও তার স্ত্রী তাসমিন সুলতানা লাবণ্য, মাঝে ছোট্ট তাহসিন। ছবি: ফেসবুক

জানা গেছে, আগামী ১০-২৩ সেপ্টেম্বর হাঙ্গেরির বুদাপেস্টে হবে ৪৫তম দাবা অলিম্পিয়াড। যেখানে তাহসিনকে খেলানোর ইচ্ছা ছিল জিয়ার। অনেকে বলেন, ছেলের জন্য খুবই ‍চিন্তায় ছিলেন জিয়া। শনিবার (৫ জুলাই) ছিল জাতীয় দাবা চ্যাম্পিয়নশিপের শেষ রাউন্ড। এ রাউন্ডের আগ পর্যন্ত ৮ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের দ্বিতীয় স্থানে ছিলেন জিয়া। কিন্তু জিয়ার ছেলে তাহসিনের অবস্থা এবারের দাবায় খুব বেশি সুবিধাজনক স্থানে নেই। ৬ পয়েন্ট নিয়ে ষষ্ঠ স্থানে আছেন তিনি। শুক্রবার আন্তর্জাতিক মাস্টার আবু সুফিয়ান শাকিলের সঙ্গে জেতা ম্যাচ ড্র করেছেন। এতে পয়েন্ট টেবিলের ছয় থেকে পাঁচে ওঠার সম্ভাবনাও ক্ষীণ হয়ে যায় তাহসিনের। আর যেহেতু জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপের সেরা পাঁচ জন সুযোগ পায় দাবা অলিম্পিয়াডে। তাই তাহসিনের সম্ভাবনাও কম দেখছিলেন জিয়া। কে জানে মৃত্যুর সময় হয়তো ছেলের কথা চিন্তা করছিলেন জিয়া।

খেলার পাশাপাশি কোচিংও করাতেন সদ্য প্রয়াত জিয়া। দেশে ও বিদেশে জিয়ার রয়েছে প্রচুর ছাত্র। শুধু তাই নয় নিজের ছেলের কোচিংও করাতেন জিয়াই। ঘরের মধ্যে এমন অনুশীলন সঙ্গী আর কেই বা এভাবে পেয়েছেন? দাবার বোর্ডে বাবা জিয়াউর রহমানের সঙ্গে ছেলে তাহসিন তাজওয়ারের লড়াইটা ইদানিং চিরায়ত দৃশ্য ছিল। এ দৃশ্য চিরদিনের জন্য থেমে গেল।

উল্লেখ্য, জিয়ার বাবা পয়গাম উদ্দিন আহমেদও দাবাড়ু ছিলেন। ১৯৮৪ সালে জাতীয় দাবা প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছিলেন। একই পরিবারে তিন প্রজন্মের (দাদা-বাবা-ছেলে ) জাতীয় দাবায় অংশগ্রহণের রেকর্ড বাংলাদেশে অন্য কারো নেই। জিয়ার স্ত্রী লাবণ্যও ২০১০ সালে জাতীয় মহিলা দাবার বাছাইয়ে অংশ নিয়েছিলেন।

সর্বাধিক পঠিত