০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪

দেশের দাবায় বিরল রেকর্ড, প্রথমবারের মতো বিশ্ব দাবা অলিম্পিয়াডে অংশ নিচ্ছেন দুই বোন ওয়ালিজা ও ওয়াদিয়া

কিশোর ডাইজেস্ট ডেস্ক
০৮ জুলাই ২০২৪, ১০:৩২
মা তাসলিমা খাতুনের সঙ্গে ওয়ালিজা (বাঁয়ে) ও ওয়াদিফা। ছবি: সংগৃহীত

হাঙ্গেরির বুদাপেস্টে আগামী সেপ্টেম্বরে অনুষ্ঠিত হবে ৪৫তম দাবা অলিম্পিয়াড। টুর্নামেন্টের জন্য বাংলাদেশ উম্মুক্ত দল এখনো চূড়ান্ত হয়নি। তবে মহিলা দল চূড়ান্ত হয়ে গেছে আগেই। এবারের জাতীয় মহিলা দাবার শীর্ষ পাঁচ দাবাড়ু পেয়েছেন অলিম্পিয়াডের টিকিট। শীর্ষ পাঁচ দাবাড়ুর মধ্যে আছেন দুই বোন ওয়ালিজা আহমেদ ও ওয়াদিয়া আহমেদ। বাংলাদেশের দাবার ইতিহাসে এই প্রথম দুই বোন বিশ্ব দাবা অলিম্পিয়াডে অংশ নেবেন।

ছোটবেলা থেকেই দাবায় হাতেখড়ি ওয়ালিজা ও ওয়াদিয়ার। তাদের বাবা মাঈনুদ্দিন আহমেদও দাবা খেলায় পারদর্শী। তিনি কাজের সন্ধানে ইতালি চলে যান ১৯৯০ সালে। দেশে এসে ২০০০ সালে বিয়ে করেন। তাদের মায়ের নাম তাসলিমা খাতুন। ইতালিতেই জন্ম দুই বোনের। সদ্য  কৈশোর পেরোনো ওয়ালিজার জন্ম ২০০৩ সালে, কিশোরী ওয়াদিফার জন্ম ২০০৮ সালে। ইতালিতেই তাদের দাবার হাতেখড়ি। তাদের মা তাসলিমা খাতুন বলেন, ‘ওদের বাবা ইতালিতে গিয়েও দাবা খেলত। অনেক পুরস্কার আনত বাসায়।’ সেই পুরস্কার দেখে বড় মেয়ে ওয়ালিজার কৌতূহল জাগে। তারপর ধীরে ধীরে দাবার প্রতি জন্ম হয় ভালোবাসা।’

দাবার দু্ই তারকা, দুই বোন লিজা ও ওয়াদিফা। ছবি: সংগৃহীত

ওয়ালিজা বলেন, ‘বাবা বিশাল বিশাল কাপের মতো ট্রফি পেত। এগুলো দেখে আমি ভাবতাম, এত বড় কাপে বুঝি পানি খায়। বাবা প্রথমে সেভাবে দাবা শেখাতে চাইতেন না আমাকে। মা আমাকে ঘুঁটি-বোর্ড চেনান। যখন বাবা দেখেন আমি চাল দিতে পারি, উনি অবাক হন এবং আমাকে শেখান।’ আর বোনের কাছে শেখে ওয়াদিফা। পরে বাবা তাদের প্রশিক্ষণ দেন।

পরবর্তীতে দুই বোনের লেখা পড়ার জন্যই মা ২০১৫ সালে তাদের বাংলাদেশে নিয়ে আসেন। কারণ ইতালিতে ইতালিয়ান ভাষায় লেখাপড়া করে কোনো লাভ নেই। এই ভাষা অন্য দেশে কাজে লাগে না। আবার অন্য ভাষায় লেখাপড়া করার সুযোগও নেই। ওয়ালিজা যখন দেশে দাবা খেলা শুরু করেন তখন ছোট বোন ওয়ালিজা সাথেই যেতেন আর ছোটাছুটি করতেন। এরপর নিজেও হয়ে যান দাবাড়ু।

এবারের জাতীয় মহিলা দাবায় সেরা ৫-এ থাকার আগে ২০২২ সালে জাতীয় সাফ জুনিয়র দাবায় চ্যাম্পিয়ন হন ওয়ালিজা আহমেদ। তিনি এবার এইচএসসি দেবেন ভিকারুননেসা নূন স্কুল থেকে। আর গত বছর এই শিরোপা দখলে নেন ওয়াদিফা। তিনি ইস্পাহানী স্কুলের নবম শ্রেণীর ছাত্রী। ওয়াদিফা এখন মহিলা ফিদে মাস্টার। অন্য দিকে ওয়ালিজার টাইটেল মহিলা ক্যান্ডিডেট মাস্টার। হাঙ্গেরির অলিম্পিয়াডে দুই বোনেরই লক্ষ্য দেশকে ভালো অবস্থানে নেয়ার পাশাপাশি ব্যক্তিগত নর্ম অর্জন করা। উল্লেখ্য, উভয়ই বাংলাদেশ নৌবাহিনীর খেলোয়াড়। লেখাপড়ার পাশাপাশি দিনে ছয়-সাত ঘণ্টা দাবা চর্চা চলে তাদের।

দুই বোন এর আগেও এক সাথে দেশের বাইরে খেলতে গেছেন। তা ২০১৯ ও ২০২৩ সালে ভারতের দিল্লি ও জামশেদপুরে। প্রথমটি ছিল ওয়েস্টার্ন এশিয়ান জুনিয়র দাবা। পরেরটি এশিয়ান জুনিয়র দাবা। এরপর এবার যাবেন ইউরোপের মাটিতে। যদিও ভিন্ন ভিন্নভাবে তাদের আরো অনেক দেশে যাওয়া হয়েছে। ওয়াদিফাতো এর আগে নেদারল্যান্ডসে অনুষ্ঠিত অনূর্ধ্ব-১৬ দাবা অলিম্পিয়াডে অংশ নেন। ওয়ালিজার দুইবার এই সুযোগ এসেছিল। প্রথমে করোনা এবং পরে পরীক্ষার জন্য যাওয়া হয়নি।

বাবা পাশে না থাকায় তাকে খুব মিস করছেন দুই বোন। জানান, ‘বাবা পাশে থাকলে উনার সাথে খেলার বিষয় নিয়ে কথা বলা যেত। পরামর্শ করা যেত। উনি সাবেক জাতীয় খেলোয়াড়। এতে সুবিধাই হতো।’ ২০১৬ সাল থেকে মেয়েদের দাবা ফেডারেশনে নিয়ে আসছেন মা তাসলিমা খাতুন। তিনিও দাবা খেলতে পারেন। একবারতো বাসায় মেয়ে ওয়াদিফাকে হারিয়েও দেন। কিন্তু সংসার, মেয়েদের নিয়ে ব্যস্ততা তাসলিমাকে দাবাড়ু হতে উৎসাহ দেয় না, জানান তিনি।

বড় বোন ওয়ালিজা কারাতেও শেখেন। বই পড়েন। একটু গম্ভীর। ওয়াদিফা চটপটে। আগে মিষ্টি পছন্দ করত, কিন্তু বড় বোন মিষ্টি খান না বলে সে-ও তা খায় না। ছোটজনের উচ্চতা ৫ ফুট ৪ ইঞ্চি, বড়জন ৫ ফুট ৩। ওয়ালিজা হেসে বললেন, ‘চেহারা, উচ্চতা-টুচ্চতা মিলিয়ে সবাই আমাদের যমজ বোন মনে করে।’

বাংলাদেশ দাবার আন্তর্জাতিক বিচারক হারুনুর রশিদ নতুন একটা তথ্য দেন, ‘জানেন তো, ওদের বাবা মাঈনুদ্দিন আহমেদ (মামুন) কিন্তু জাতীয় দাবাড়ু ছিল। একবার খেলেছে ন্যাশনালে।’ সবমিলিয়ে বলা যায়, যেন দাবা পরিবার।

সর্বাধিক পঠিত