১৮ অক্টোবর ২০২৪

নাড়ির টানে কিশোরগঞ্জে চালকবিহীন হেলিকপ্টারের আবিষ্কারক

কিশোর ডাইজেস্ট ডেস্ক
২৪ মে ২০২৪, ২১:১৩
নাড়ির টানে কিশোরগঞ্জে চালকবিহীন হেলিকপ্টারের আবিষ্কারক। ছবি: সংগৃহীত

রাস্তার পাশে অপেক্ষমাণ শত শত মানুষ। ছেলে-বুড়ো সকলের অপেক্ষা গ্রামের গর্বিত সন্তান বিজ্ঞানী ও বীর মুক্তিযোদ্ধা ড. হুমায়ুন কবিরের জন্য। তিনি চালকবিহীন হেলিকপ্টারের আবিষ্কারক। অপেক্ষার প্রহর শেষে শুক্রবার (২৪ মে) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে হেলিকপ্টারে করে নিজ জন্মভূমি কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলার চন্ডিপাশা বড় আজলদি গ্রামে এসে পৌঁছান তিনি। এ সময় ফুলের মালা দিয়ে বরণ করে নেন আত্মীয়স্বজন ও এলাকাবাসী। দীর্ঘ ২০ বছর পর নিজের মাটিতে এসে আবেগাপ্লুত তিনি। বরণ করে নিতে রাস্তার উপর গেট নির্মাণ করে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন প্রতিবেশীরাও।

বিজ্ঞানী বীর মুক্তিযোদ্ধা ড. হুমায়ুন কবিরের বাবার বাড়ি কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলার বনগ্রাম ইউনিয়নের নাগেরগ্রামে হলেও শৈশব ও কৈশোর কেটেছে পাকুন্দিয়া উপজেলার চন্ডিপাশা ইউনিয়নের বড় আজলদী গ্রামের নানার বাড়িতে। কারণ সপ্তম শ্রেণিতে পড়ার সময় তার বাবা-মায়ের বিচ্ছেদ হয়। এ কারণে তাকেও ছাড়তে হয়েছিল বাড়ি। অর্থনৈতিক অবস্থা সচ্ছল না থাকায় নানার সঙ্গে গ্রামের সুখিয়া বাজারে কেরোসিন তেল বিক্রি করে পড়াশোনার খরচ চালানো হুমায়ুন কবির এখন সকলের গর্ব। তাকে দেখতে ভিড় করেছেন নিজ জন্মভূমি ছাড়াও আশপাশের শত শত মানুষ।

বিশ্বযুদ্ধের সৈনিক আব্দুল মান্নান জানান, বিজ্ঞানী হুমায়ুন কবীর সম্পর্কে আমার নাতি হয়। ছোটবেলা থেকে সে অসম্ভব মেধার অধিকারী ছিল। পড়ালেখার ফাঁকে ফাঁকে সংসার চালানোর জন্য নানার সঙ্গে কেরোসিন বিক্রি করত রাস্তার মোড়ে। অসম্ভব মেধা এবং কঠোর পরিশ্রমের কারণে আজ তিনি বিশ্বখ্যাত বিজ্ঞানী। ছোটবেলা মুক্তিযুদ্ধেও অংশগ্রহণ করেছেন তিনি। তাকে নিয়ে আমরা গর্বিত এবং আনন্দিত।

এলাকার খোদেজা আক্তার বলেন, ছোটবেলা থেকে সে অনেক মেধাবী ছিল। আমরা তাকে কোলে-পিঠে করে বড় করেছি। অনেক কষ্ট করে বড় হয়েছে। আজকে সে আমাদের মাঝে বিজ্ঞানী হয়ে এসেছে, আমরা তাকে দেখতে এসেছি। খুবই আনন্দ লাগছে।

বিজ্ঞানী ড. হুমায়ুন কবির বলেন, বাংলাদেশে আসতে পেরে আমার খুবই ভালো লাগছে। আমি খুব গর্বিত। বিশেষ করে আমার এলাকার মানুষজনের খুশি দেখে আমি আবেগাপ্লুত। দেশে থাকাকালীন প্রেসিডেন্ট আব্দুল হামিদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সেমিনারে অংশগ্রহণ করব। আমার প্রথম আবিষ্কার চালকবিহীন হেলিকপ্টার। এরপরও আমি বড় কয়েকটি কাজ করেছি। বর্তমানে আমি বোয়িং কোম্পানিতে কর্মরত। বিজ্ঞানমনস্ক শিক্ষার্থীদের জন্য আমার বার্তা হলো, পৃথিবীতে অসম্ভব বলে কোনো কাজ নেই। সেজন্য তাকে অসম্ভব পরিশ্রম করতে হবে।

বাংলাদেশ নিয়ে ভাবনার প্রশ্নে তিনি জানান, বাংলাদেশ নিয়ে আমার ভাবনা এটাই যে, আমি যে বিষয়গুলো আবিষ্কার করেছি, যে বিষয় নিয়ে কাজ করছি, এগুলো বাংলাদেশ ব্যবহার করবে। তবে এগুলো বাংলাদেশের পক্ষে তৈরি করা সম্ভব না। যেমন বাংলাদেশের সকল বিমানগুলো বোয়িং কোম্পানির বিমান, যেখানে আমি কর্মরত রয়েছি। যেমন এই বিমানগুলোর কারণে মানুষের হজ করতে যাওয়া সহজ হয়েছে। আগে অনেক দিন সময় লাগত, এখন কয়েক ঘণ্টার মধ্যে যেতে পারে। এখানেও আমার অবদান প্রত্যক্ষ না থাকলেও পরোক্ষভাবে রয়েছে।

উল্লেখ্য, ড. হুমায়ুন কবির ঢাকা কলেজ থেকে ১৯৭২ সালে উচ্চ মাধ্যমিকে কৃতিত্বপূর্ণ ফল করেন। পরে আইএ পাস করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ফলিত পদার্থবিদ্যা বিভাগে ভর্তি হন হুমায়ুন কবির। গণিতশাস্ত্র ও গবেষণার প্রতি আকর্ষণ ছিল বেশি। তাই ১৯৭৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্স পাঠ শেষ না করেই তিনি পাড়ি জমান আমেরিকায়। এরোস্পেস ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে বিএস করার জন্য ভর্তি হন ইউনিভার্সিটি অব টেক্সাস অ্যাট আর্লিংটনে। এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ড. হুমায়ুন কবীর অ্যারোনটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে স্নাতক, স্নাতকোত্তর ও পিএইচডি অর্জন করেছেন। হুমায়ুন কবির ডক্টরেট ডিগ্রি লাভ করেন অস্টিনের টেক্সাস ইউনিভার্সিটি থেকে। তার গবেষণার বিষয় ছিল মহাশূন্যযান ও রকেট বিজ্ঞান। ড. হুমায়ুন কবির বিশ্বের প্রথম রিমোট কন্ট্রোল হেলিকপ্টারের উদ্ভাবক। ১৯৮৬ সালে হুমায়ুন কবির আবিষ্কার করেন রিমোট নিয়ন্ত্রিত এইচ-৫ সায়েন্স হেলিকপ্টার। তিনি বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত বোয়িং কোম্পানিতে ঊর্ধ্বতন বিজ্ঞানী হিসেবে কর্মরত। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন ইঞ্জিনিয়ারিং এবং বিজ্ঞানভিত্তিক বিচিত্র সাময়িকী গ্রন্থে একক ও যৌথভাবে বিজ্ঞান বিচিত্রা নামে বিজ্ঞানী হুমায়ুন কবিরের ৩৫টিরও বেশি গবেষণাধর্মী প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে।

সর্বাধিক পঠিত