১৮ অক্টোবর ২০২৪

ভিপিএন কী? ভিপিএন ব্যবহারের সুবিধা ও ঝুঁকি কী কী?

কিশোর ডাইজেস্ট ডেস্ক
২৫ জুলাই ২০২৪, ২০:৫২
ভিপিএন ব্যবহারের যেমন কিছু সুবিধা আছে, তেমন আছে কিছু ঝুঁকিও। ছবি: সংগৃহীত

ডিজিটাল জগতে, অনলাইনে প্রাইভেসি সুরক্ষা, নিরাপত্তা বাড়ানো ও অপ্রবেশযোগ্য কনটেন্ট দেখার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ টুল হয়ে উঠেছে ‘ভার্চুয়াল প্রাইভেট নেটওয়ার্ক’ বা ‘ভিপিএন’। বিভিন্ন সময়ে চীনসহ বিভিন্ন দেশে ভিপিএন-এর সহায়তায় অনলাইন এক্সেস করার কথাও উঠে এসেছে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে। ভিপিএন ব্যবহারের যেমন কিছু সুবিধা আছে, তেমন আছে কিছু ঝুঁকিও। এ লেখায় ভিপিএন সম্পর্কে থাকল নানা আলোকপাত। আশা করি, তা অনেকের কাজে লাগবে। 

ভিপিএন কী
ভিপিএন হলো এমন এক ধরনের নেটওয়ার্ক কাঠামো, যেখানে কোনো প্রাইভেট নেটওয়ার্ক দিয়ে ভার্চুয়াল উপায়ে অন্য এক বা একাধিক নেটওয়ার্কের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করার সুযোগ মেলে। এর ফলে, পাবলিক নেটওয়ার্কেও নিজস্ব প্রাইভেট নেটওয়ার্ক ব্যবহারের সুবিধা পাওয়া যায়।

অন্যান্য যে কোনো প্রযুক্তির মতোই ভিপিএন ব্যবহারের নিজস্ব কিছু সুবিধা ও অসুবিধা আছে, যা নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে সংবাদ সাইট মিডিয়াম।

কী কী সুবিধা পাওয়া যায় ভিপিএন থেকে
অনলাইনে প্রাইভেসি বাড়ানো: ভিপিএন ব্যবহারের প্রাথমিক সুবিধাগুলোর একটি হলো ব্যবহারকারীর ইন্টারনেট সংযোগ এনক্রিপ্ট করার সক্ষমতা, যার ফলে বিভিন্ন ‘আইএসপি (ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার)’, হ্যাকার, সরকারি লোকজনের ‘বদনজর’ থেকে রেহাই পাওয়ার সুযোগ মেলে। নিরাপদ সংযোগ থেকে ব্যবহারকারীর ইন্টারনেট ডেটায় অন্য কারো মনিটরিং বা ব্যাঘাত ঘটানোর বিষয়টিও ঠেকিয়ে দেয় ভিপিএন।

অ্যাননিমাস বা অজ্ঞাতপরিচয়ে ইন্টারনেট ব্যবহার: ভিপিএন-এর সহায়তায় ব্যবহারকারী নিজের আইপি অ্যাড্রেস ও ভৌগলিক অবস্থান গোপন রাখার সুযোগ পান, যার ফলে বিভিন্ন ওয়েবসাইট, বিজ্ঞাপনদাতা এবং অনলাইন ট্র্যাকারের পক্ষে ব্যবহারকারীর অনলাইন গতিবিধি নজরদারি করা জটিল হয়ে ওঠে। এ ছদ্মবেশ প্রাইভেসি ও নিরাপত্তার একটি বাড়তি স্তর যোগ করে, বিশেষ করে বিভিন্ন স্পর্শকাতর বা সেন্সর করা কনটেন্ট দেখার ক্ষেত্রে।

দূর থেকে নিরাপদে ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ: দুর্গম জায়গা থেকে বিভিন্ন কর্পোরেট নেটওয়ার্কে সংযোগ ঘটানো ও গোপন ব্যবসায়িক তথ্যে প্রবেশের সুযোগ দিয়ে থাকে ভিপিএন। এক্ষেত্রে ব্যবহারকারীর ডিভাইস ও কর্পোরেট নেটওয়ার্কের মধ্যে ডেটা আদান প্রদান এনক্রিপ্ট করার মাধ্যমে ভিপিএন নিশ্চিত করে, বিভিন্ন স্পর্শকাতর তথ্যে অনুমতি ছাড়া প্রবেশের সুযোগ না মেলে, এমনকি অনিরাপদ ওয়াই-ফাই নেটওয়ার্কের ক্ষেত্রেও।

সাইবার আক্রমণের হুমকি থেকে সুরক্ষা: ইন্টারনেট ট্রাফিকিং এনক্রিপ্ট করার পাশাপাশি ভিপিএন বিভিন্ন ধরনের সাইবার নিরাপত্তা হুমকি যেমন ‘ম্যান ইন দ্য মিডল’ ধাঁচের সাইবার আক্রমণ, ‘ডিএনএস স্পুফিং’ এমনকি ওয়াই-ফাই থেকে ব্যবহারকারীর গতিবিধি আড়ি পেতে শোনার মতো ঘটনার ক্ষেত্রে সুরক্ষা দিতে সক্ষম। আর ডেটা ট্রান্সমিশনের জন্য একটি নিরাপদ ‘টানেল’ তৈরি করে, ব্যবহারকারীর ডেটায় ব্যাঘাত বা অননুমোদিত প্রবেশাধিকারের ঝুঁকি ঠেকিয়ে দেয় ভিপিএন, যেখানে তার সার্বিক সাইবার নিরাপত্তাও বেড়ে যায়।

ভিপিএন-এর ব্যবহারে কী কী ঝুঁকি
সাইবার নিরাপত্তা: ভিপিএন-এর প্রাথমিক কথাই হচ্ছে ব্যবহারকারীর পরিচয় গোপন রাখা। ফলে, কোনো কারণে ব্যবহারকারীর ক্রেডেনশিয়াল বা পরিচয় শনাক্তকরণ তথ্যাদি, ধরা যাক ইউজারনেইম ও পাসওয়ার্ড অন্য কেউ পেয়ে গেলে সেগুলোর অপব্যবহার করে তৃতীয় কেউ তার অ্যাকাউন্ট হাতিয়ে নিতে পারে। সহজ ভাষায়, হ্যাকারের হাতে ভিপিএন ব্যবহারকারীর তথ্য চলে গেলে হ্যাকিং অনেক সহজ হয়ে যায়।

ইন্টারনেটের গতি কমে যাওয়া: ভিপিএন ব্যবহারের ক্ষেত্রে সবচেয়ে সাধারণ অসুবিধা হলো ইন্টারনেট সংযোগের গতি কমে যাওয়া। যেহেতু ভিপিএন বিভিন্ন দুর্গম সার্ভারের মধ্য দিয়ে ডেটা পাঠায় ও ডেটা ট্রান্সমিশন এনক্রিপ্ট করে, সেহেতু ব্রাউজিংয়ের সময় কম গতি ও বিলম্বের মতো অভিজ্ঞতার মুখে পড়তে পারেন ব্যবহারকারী। বিশেষ করে এমন সার্ভারের বেলায়, যেগুলোর অবস্থান ব্যবহারকারীর অবস্থান থেকে অনেক দূরে।

খরচের বিষয়: অনেক ভিপিএন গ্রাহক সেবা বিনামূল্যে বা কম খরচে ব্যবহার করা গেলেও প্রিমিয়াম শ্রেণির ভিপিএন সেবাগুলোয় বিভিন্ন উন্নত ফিচার ও উচ্চ গতির সার্ভার ব্যবহারের সুবিধা মেলে। তবে, এক্ষেত্রে পয়সা গুনতে হয়। বাজেট নিয়ে শঙ্কিত ব্যবহারকারীর কাছে পয়সা খরচ করে গ্রাহক সেবা কিনে সুবিধা নেওয়ার বিষয়টি বিলাসিতা মনে হতে পারে, বিশেষ করে তাদের যদি প্রাইভেসি বা ভৌগলিক অবস্থানের ভিত্তিতে কনটেন্ট আনব্লক করার তেমন প্রয়োজনীয়তা না থাকে।

জটিলতা ও কারিগরি চ্যালেঞ্জ: একটি ভিপিএন সেটআপ বা কনফিগার করা অনভিজ্ঞ ব্যবহারকারীর কাছে ভীতিকর হতে পারে, বিশেষ করে এনক্রিপশন প্রোটোকল, সার্ভার বাছাই ও ‘টানেলিং’ আলাদা করার মতো বিভিন্ন উন্নত ফিচার ব্যবহারের ক্ষেত্রে। এ ছাড়া, ইন্টারনেট সংযোগে ‘ট্রাবলসশুটিং’, ‘ডিএনএস’ বা ‘ডোমেইন নেইম সিস্টেম’ ফাঁস বা নির্দিষ্ট কিছু অ্যাপ্লিকেশন অথবা ডিভাইস সেটআপের বেলায় কারিগরি বিশেষজ্ঞের প্রয়োজনীয়তা, এমন বিষয়গুলো চ্যালেঞ্জিং হতে পারে তুলনামূলক কম প্রযুক্তিজ্ঞানসম্পন্ন ব্যক্তিদের কাছে।

সেবাদাতার ওপর নির্ভরতা: বিভিন্ন ভিপিএন সেবায় সত্যিকারের প্রাইভেসি ও নিরাপত্তা সুবিধার কথা উল্লেখ থাকলেও কিছু ক্ষেত্রে এগুলো অসৎ উদ্দেশ্যে ব্যবহার হওয়ার ঝুঁকি থাকে। বর্তমানে হাজার হাজার ভিপিএন সফটওয়্যার ও অ্যাপ পাওয়া যায়। ব্যবহারকারীর ডেটা যেহেতু ভিপিএন সেবাদাতার হাত দিয়ে যায়, তাই সেবাদাতার সততার ওপর নির্ভর করে ব্যবহারকারীর তথ্য নিরাপত্তা।

পরিশেষে বলা যায়, ব্যবহারকারীর প্রাইভেসি সুরক্ষা, নিরাপত্তা বৃদ্ধি ও কনটেন্টে প্রবেশের ক্ষেত্রে ভিপিএন-এ অনেক সুবিধা মেলে। তবে, এর সুবিধার পাশাপাশি খেয়াল রাখা দরকার এর অসুবিধা গুলো কতটুকু ঝামেলা তৈরি করে ব্যবহারকারীর জন্য।

ভিপিএন-এর বিভিন্ন সুবিধা ও অসুবিধা বোঝার মাধ্যমে, এ প্রযুক্তি ব্যবহার করা উচিৎ কি না, বা এতে কীভাবে সম্পৃক্ত হওয়া উচিৎ, তা নিয়ে ব্যবহারকারী আরও ভালোভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুযোগ পাবেন বলে প্রতিবেদনে লিখেছে মিডিয়াম।

সর্বাধিক পঠিত