রাজধানী ঢাকাবাসীর খানিকটা হলেও দুর্ভোগ লাঘব করেছে স্বপ্নের মেট্রোরেল। এটার সুফল এখন পাচ্ছেন সর্বস্তরের মানুষ। মেট্রোরেলে যারা চলাচল করেন, তারা প্রতিদিনই শুনতে পান বিভিন্ন দিকনির্দেশনা নিয়ে ভেসে আসে একটি মেয়ের কণ্ঠ। অনেকে ভাবতেন, এটি মেশিন জেনারেটেড ভয়েস। আদতে তা নয়। ব্যস্ত নাগরিক জীবনকে সহজ করতে মেট্রোতে ব্যবহৃত কণ্ঠটি বাংলাদেশেরই একজন মেয়ের। তাঁর নাম কিমিয়া অরিন। তাঁর সম্পর্কে জানেন?
কিমিয়া অরিন সম্প্রতি একটি সংবাদ মাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেন। জানান তাঁর কণ্ঠের যাত্রাপথের ধারাবাহিকতা নিয়ে। কিমিয়া বলেন, তিনি বাংলাদেশে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কাজ করেছেন। পাশাপাশি বাংলাদেশ টেলিভিশনে ইংরেজি সংবাদ পাঠিকা হিসেবে কাজ করেছেন। কাজ করেছেন বাংলাদেশ বেতারেও। বর্তমানে পড়াশোনার জন্য বাস করছেন কানাডায়।
জানা যায়, কিমিয়া বর্তমানে কানাডায় মাস্টার্স করছেন। আগামী বছর পড়াশোনা শেষ হবে। ভয়েস নিয়ে মানুষের কৌতুহল নিয়ে কিমিয়া বলেন, ‘মাঝে মাঝে আমার বন্ধুরা আমাকে ‘স্ক্রিন শট’ পাঠাত যে এটা কি আসলেই মানুষের ভয়েস না কি মেশিন জেনারেটেড ভয়েস। শুরুর দিকে সবাইকে বললে কেউ বিশ্বাস করত না যে এটা আমার ভয়েস। এমন কি আমার কাছের মানুষও আমার ভয়েস চিনত না। মেট্রোরেলে ভিডিও যে মানুষ আপলোড করত, আমি সেই লিংক দিয়ে বলতাম এটা আমি, এই ভয়েস আমি দিয়েছি।’
তিনি বলেন, ‘অনেকে মজা করে সামাজিক মাধ্যমে লিখত তে এই আপা কি বাস্তবে আছে, না কি এটা কম্পিউটারে করা। শুরুতে যখন আমি মেট্রোরেলে নিজের ভয়েস শুনি, খুবই এক্সাইটেড হয়ে গিয়েছিলাম। সবাই আমার দিকনির্দেশনা শোনার জন্য অপেক্ষা করছেন, এটি দারুণ ব্যাপার মনে হয়েছে। আমি দেশের বাইরে থাকলেও যখন মনে পড়ে দেশের লোকজন আমার ভয়েসের জন্য অপেক্ষা করছেন, তখন খুবই ভালো লাগে। আমি এত দূরে থেকে দেশের জন্য সার্ভিস দিয়ে যাচ্ছি, এটা মনে পড়লেই ভালো লাগা কাজ করে।’
ভয়েস দেওয়ার শুরুর গল্প হিসেবে কিমিয়া বলেন, ‘প্রথমদিকে বিটিভির একজন রিপোর্টার আমাকে বললেন, আপনি মেট্রোরেলে ভয়েস দিতে চাইলে সিভি দিতে পারেন। আমি তাঁর কথায় সিভি দেই। কাজের স্যাম্পল হিসেবে আমার ইউটিউব থেকে ভিডিওগুলোও দেওয়া হয়। শুরুতে হয়েছিল টিকিট ভেন্ডিং মেশিনের কাজ। তখন ছিল করোনাকালীন সময়ের মাঝের দিক। অনেকবার ভয়েস দেওয়ার পর নানাভাবে বিশ্লেষণ করে সর্বশেষ আমার ভয়েসটিই নির্বাচিত হয়।’
কিমিয়া অরিন বলেন, ‘প্রথমবার প্লাটফর্মের জন্য ভয়েস নেওয়ার পর ট্রেনের জন্য ভয়েসের কাজ করি। প্লাটফর্মের ভয়েসের জন্য অনেক কষ্ট করা হলেও ট্রেনের জন্য সে রকম হয়নি। আর শেষের দিকে আমি এলিভ্যাটেড ও লিফটের জন্য কাজ করেছি।’
বর্তমানে মেট্রোরেল ১৭৮ বার যাতায়াত করছে ঢাকার বিভিন্ন জায়গায়। প্রতিদিন গড়ে ২ লাখ ৭০ হাজার যাত্রী মেট্রো ব্যবহার করেন। আর প্রতিদিন একটি ট্রেনে ১ হাজার ৭৫০ জন যাত্রী যাতায়াত করছেন।
উল্লেখ্য, ২০২২ সালের ২৮ ডিসেম্বর মেট্রোরেলের উত্তরা থেকে আগারগাঁও অংশের চলাচলের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর আগারগাঁও থেকে মতিঝিল অংশে যাত্রী চলাচলের জন্য গত ৪ নভেম্বর উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী।